ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের বৈলর বাশকড়ি এলাকায় ঘটেছে এক রোমহর্ষক ঘটনা। অনলাইন জুয়ায় আসক্ত একমাত্র ছেলে রাজু শেখ (২৬) জুয়ার টাকার জন্য নিজ মা-বাবাকে হত্যা করে শয়নকক্ষে পুঁতে রাখে। পুলিশ ঘটনার পরপরই ঘাতক রাজুকে আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার (৮ অক্টোবর) রাতে এ ঘটনাটি ঘটে। নিহতরা হলেন—মোহাম্মদ আলী (৭০) ও বানুয়ারা বেগম (৫৫)।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাজু অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। টাকার জন্য প্রায়ই বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করত। বুধবার সকাল ১১টার দিকে সে প্রথমে মা বানুয়ারা বেগমকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘরে পুঁতে রাখে। এরপর রাতে (প্রায় ২টার দিকে) বাবা মোহাম্মদ আলীকেও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়। এই নৃশংস ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায় ঘটনাস্থলে।
প্রতিবেশী আনোয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা কখনো ভাবিনি রাজু এমনটা করতে পারে! অনলাইনে টাকা হারানোর পর থেকেই মাথা খারাপের মতো আচরণ করত। আজ নিজের মা-বাবাকেই মেরে ফেলল! আল্লাহ যেন এর বিচার করেন।’
স্থানীয় দোকানদার মো. ছালাম মিয়া বলেন, ‘রাজু আগে শান্ত ছেলে ছিল। কিন্তু অনলাইন জুয়ার নেশায় জীবনটা শেষ করে ফেলল। আমরা অনেকবার বুঝিয়েছি, শোনেনি। এমন ঘটনা ত্রিশালে আগে দেখিনি।’
আরেক বাসিন্দা রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘আলী ভাই সারাজীবন কষ্ট করে সংসার চালিয়েছে, সেই ছেলেই টাকার জন্য বাবাকে হত্যা করেছে—এটা শোনার পর চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি।’
প্রতিবেশী নাসিমা বেগম জানান, রাজু কিছুদিন ধরে সারাক্ষণ মোবাইলেই সময় দিত। অনলাইনের এই নেশাই তার পরিবার ধ্বংস করে দিল।
নিহতের মেয়ে জরিনা খাতুন কালবেলাকে বলেন, ‘বাবা সন্ধ্যায় বাসায় এসে মাকে খুঁজছিল, মাকে না পেয়ে বাবা আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে। তারপর না পাইয়া আমাদেরকে ফোন দেয়। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে, কোথাও মাকে খুঁজে পাইনি, অতঃপর রাতে আব্বাকে ফোন দেই ফোন বন্ধ পাই। মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে রাজুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি আব্বা আম্মা কোথায়। রাজু বলছে, আব্বা আম্মাকে খুঁজতে গেছে। রাত পোহালেই আমরা চলে আসছি। আইয়া দেখি রাজু খাটের উপর বইসা রইছে, ঘরের ভিতরের আসবাবপত্র এলোমেলো দেখে সন্দেহ হয়।’
তিনি আরও বলেন, “খাটের ওপরে থাকা সবকিছু ভিজা কেন জানতে চাইলে বলে পানি পড়েছে বিছানায়। পরে ঘরে থাকা ট্রাংকের নিচে বালুমাখা জিনিস দেখে সন্দেহ আরও গভীর হয়। এক পর্যায়ে ট্রাংকের নিচের বালু সরাতেই রাজু বলে, ‘মা-বাবারে পুঁতে রাখছি।’ আমার চিল্লাচিল্লিতে এলাকা মানুষ সবাই আইশা পড়ছে। আইশা তারে সবাই ধরছে। এলাকার মানুষ পুলিশরে খবর দিয়েছে পুলিশ আইশা তারে দরছে।”
এ বিষয়ে ত্রিশাল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনসুর আহম্মেদ কালবেলাকে বলেন, ‘ঘাতক ছেলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।’
তিনি জানান, তার (রাজু) মনে শান্তি নাই। বিগত কয়েক বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেছেন, স্ত্রী ছাড়াও তার একটি মেয়েসন্তান আছে। আগে তিনি একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন; কিন্তু বর্তমানে তার কোনো কর্ম নেই। তাই কিছুদিন ধরে তিনি ব্যবসার জন্য বাবা-মায়ের কাছে টাকা চাইছিলেন। কিন্তু বাবা-মা টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি রাগে ক্ষোভে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এ ঘটনায় নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।
মন্তব্য করুন