ফরিদপুরে মধুমতী নদীতে বিলীন হয়েছে গৃহহীনদের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ১৪টি ব্যারাক। ২০১১-১২ অর্থবছরে মোট ২৬টি ব্যারাক নির্মাণ করে যেখানে ১৩০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।
দ্রুত নদীভাঙন রোধ করা না গেলে বাকি ১২টি ব্যারাক নদীতে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে বসবাসকারীরা। এরই মধ্যে অতি ঝুঁকিতে থাকায় আরও তিনটি ব্যারাকের টিন ইট ও লোহার অ্যাঙ্গেল খুলে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নের চাপুলিয়া গ্রামে মধুমতী নদীর তীর ঘেঁষে ১৩০টি পরিবারের আবাসনের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ২৬টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ব্যারাকে পাঁচটি করে গৃহহীন পরিবার বসবাস করতে পারে। তবে বসবাস শুরুর কয়েক বছরের মাথায় নদীভাঙনের কবলে পড়ে ব্যারাকগুলো।
ভাঙনের কারণে গত ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৪টি ব্যারাক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বছরে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও তিনটি ব্যারাক, যেখানে ১৫টি পরিবার বসবাস করছিল। গত কয়েকদিনে এই ব্যারাক তিনটি অতিঝুঁকিতে থাকায় স্থানীয়রা ঢেউটিন, লোহার অ্যাঙ্গেল ও ইট খুলে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। তবে ঢেউটিন, লোহার অ্যাঙ্গেল ও ইট খুলে বিক্রির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন কেউ কেউ।
স্থানীয় বাসিন্দা মর্জিনা বেগম নামে এক নারী বলেন, মধুমতী নদীভাঙনে আমার দেবরের ঘর ভেঙে যাচ্ছিল, যে কারণে তারা ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। তাই তার ঘরের মালপত্র খুলে নিয়ে আমাদের কাছে রেখে দিয়েছি। এগুলো বিক্রি করব না, নতুন আরেকটি ঘর করা হবে।
চাপুলিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার সভাপতি আকুব্বর শেখ বলেন, শুরুতে ১৩০ পরিবারের বসবাস ছিল। প্রতি বছর নদীতে ভাঙতে ভাঙতে এখন আমরা মাত্র ৩০ পরিবার আছি। প্রকল্পের ঘরগুলোর মালপত্র গোপনে বিক্রি হচ্ছে কি না আমি জানি না।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) আবুল কালাম কালু বলেন, মধুমতী নদীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভেঙে যাওয়ার সুযোগে ওখানের কিছু লোকজন সরকারি মালপত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। ঘরগুলো যখন নির্মাণ করা হয়, তখন নদী অন্তত এক কিলোমিটার দূরে ছিল। এরপর থেকে নদী ভাঙতে ভাঙতে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের দিকে এগিয়ে আসে।
নদীভাঙনের সত্যতা স্বীকার করে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল কালবেলাকে বলেন, ১১-১২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গৃহহীন দরিদ্র মানুষের জন্য ২৬টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় নদীভাঙনের কবলে পড়ে ১৪টি টিভি ব্যারাক সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে। আমরা সোমবার ব্যারাকগুলো পরিদর্শন করে ২৬টি ব্যারাকের মধ্যে ১৪টি ব্যারাকের অস্তিত্ব পাইনি।
তিনি বলেন, এ ছাড়া তিনটি ব্যারাক অতিঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যেগুলো ব্যবহারকারীরা খুলে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন। ব্যারাকগুলো রক্ষা করতে হলে দ্রুত নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সে চিন্তা থেকে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।
ব্যারাকের ঢেউটিন, লোহার অ্যাঙ্গেল ইত্যাদি সরঞ্জাম অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা বিক্রয়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সারেজমিন পরিদর্শন করে এমন কোনো তথ্য পাইনি। তবে অতিঝুঁকিতে থাকা যে তিনটি ব্যারাকের ঢেউটিন, লোহার অ্যাঙ্গেলসহ অন্য সামগ্রী খুলে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে, সে বিষয়টি হয়তো ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকতে পারে।
আলফাডাঙ্গার মধুমতি নদীভাঙন বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন কালবেলাকে বলেন, আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নের ইকড়াইলে মধুমতী নদীর ভাঙন রোধে ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলার অনেকগুলো পয়েন্টে নদীভাঙনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, ওই স্থানগুলোর ভাঙন রোধে আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি পাস হয়ে আসতে দুই-তিন মাসের মতো সময় লাগতে পারে। প্রকল্পটি পাস হলেই আমরা আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলার মধুমতী নদীর ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হব।
মন্তব্য করুন