কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়ি দখল করে বসানো দোকানপাট ও স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। এ সময় অর্ধশতাধিক টংঘর অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। রোববার (১২ অক্টোবর) এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
মাস দুয়েক আগে রাতের আঁধারে বালিয়াড়িতে বসানো টংঘর সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী।
রোববার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে উচ্ছেদ অভিযানে নামে যৌথবাহিনী। এ সময় দোকানিরা টংঘরগুলো সরিয়ে সি-গাল সড়কে রেখে দেয়। অভিজাত হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজের সম্মুখ সড়কে টংঘর যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়। পরে প্রশাসন সড়ক থেকে স্থাপনা সরাতে মাইকিং করে দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। প্রশাসনের নির্দেশনা না মানায় ২টার পর সড়কে রাখা চারটি টংঘর এক্সাভেটরের মাধ্যমে ভেঙে দেওয়া হয়।
এ সময় বেশ কয়েকটি টংঘর সরিয়ে নেন দোকানিরা। তবে বিকেল ৪টা নাগাদ প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে ফের সি-গাল সড়ক দখলে নেন দোকানিরা।
এর আগে শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে এ সৈকতে উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে নতুন স্থাপনা ১১ অক্টোবর রাতের মধ্যে এবং পুরোনো স্থাপনা ১৬ অক্টোবরের মধ্যে সরানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আ মান্নান বলেন, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সৈকতের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা থেকে সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু হয়েছে।
দিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) আপেল মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম, কক্সবাজার সদর ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী, উপজেলা সহকারী (ভূমি) কমিশনার শারমিন সুলতানা, কক্সবাজার পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট আজিম খান। অভিযানে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, আনসার ও বিচ কর্মীরা অংশ নেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক আপেল মাহমুদ বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে অন্তত ৫০টি দোকানপাট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। দুপুর ২টার মধ্যে মালিকদের নিজ উদ্যোগে স্থাপনা সরিয়ে নিতে সময় দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু তা না করায় প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম বলেন, শনিবার রাতের মধ্যে স্থাপনা সরানোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা অমান্য করায় রোববার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
সম্প্রতি কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে দোকানপাট বসানো এবং স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। এক বছরে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক, সুগন্ধা, কলাতলী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সৈকতে কয়েকশ দোকানপাট ও স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। সৈকতের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোয় বেশি দখলের ঘটনা ঘটছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মাস তিনেকের মধ্যে সৈকতে ৬০০ চেয়ার-ছাতা, ২০০-এর মতো ভ্রাম্যমাণ দোকান, ভ্রাম্যমাণ লকার এবং পর্যটন খাতের বিভিন্ন ব্যবসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব অনুমতি নিয়েই সৈকতের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, দোকান, চেয়ার-ছাতা, লকারের অনুমতির জন্য কার্ড বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র।
১৯৯৯ সালে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সৈকত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে সরকার। আইন অনুযায়ী, সৈকতের জোয়ার-ভাটার অঞ্চল থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ ও উন্নয়ন নিষিদ্ধ।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর এবং ২০২৩ সালেও একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জেলা প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল। কিন্তু পরক্ষণেই প্রতিবেশ-সংকটাপন্ন এলাকার সি বিচ দখল হয়ে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সভাপতি নুরুল ইসলাম হেলালী বলেন, একই সঙ্গে সৈকতের ইসিএ এলাকায় গড়ে তোলা সরকারি বিভিন্ন সংস্থার স্থাপনাও সরানোর উদ্যোগ নিতে হবে। রাষ্ট্রের সংস্থাগুলোকেও আইন মানতে হবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আ মান্নান বলেন, সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বালিয়াড়িতে তৈরি দোকানপাট ও স্থাপনা নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নেওয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আহ্বান জানানো হয়েছে। কক্সবাজার সৈকতকে দখলমুক্ত রাখতে উচ্ছেদ অভিযান চলবে।
মন্তব্য করুন