

অজপাড়া গাঁয়ের দরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তান নায়েব মন্ডল। লেখাপড়া শেষ করে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির পলিটেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে চাকরি জীবন শুরু করেন। সংসার জীবনে পা রাখতে বিয়ের জন্য পাত্রীও দেখেছিলেন। এরই মধ্যে হঠাৎ অসুস্থতা অনুভব করেন নায়েব মন্ডল। ডাক্তার দেখালে জানতে পারেন তার দুটি কিডনিই ড্যামেজ হয়ে গেছে।
বিষয়টি কিছুদিন পরিবারের কাছে গোপন রাখেন। একপর্যায়ে পরিবারের লোকজন বিষয়টি জানতে পারলে শুরু হয় চিকিৎসা। অভাব অনটনের সংসারে চিকিৎসার কোনো কমতি রাখেননি তার দরিদ্র বাবা। চিকিৎসার জন্য নায়েবকে ভারতেও নেওয়া হয়েছিল।
অপরদিকে সন্তানকে প্রাণ বাঁচাতে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে এগিয়ে এসেছিলেন নায়েব মণ্ডলের মমতাময়ী মা। নিজের একটি কিডনি সন্তানের জন্য দান করে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন নায়েবের মা।
গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর শ্যামলীর সিকেডিইউ হাসপাতালে সম্পন্ন হয় কিডনি প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার। আশায় বুক বাঁধে নায়েব মণ্ডলের পরিবার।
নিজের কিডনি দিয়ে সন্তানকে বাঁচানোর খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় সৃষ্টি হয় আলোড়ন। প্রতিবেশী, স্বজন ও প্রতিবেশীসহ নেটদুনিয়ায় প্রশংসায় ভাসছিলেন নায়েব মণ্ডলের মা।
মায়ের কিডনি প্রতিস্থাপনের পর কিছুদিনের জন্য সুস্থও হয়েছিলেন নায়েব মন্ডল। কিছু দিনের জন্য নায়েবের কাছে মনে হয়েছিল অন্ধকার দিনগুলো এবার বুঝি শেষ। কিন্তু নির্মম ভাগ্য কিছুতেই তাকে আর জীবন ফিরে পেতে দিল না।
সব চেষ্টা, ত্যাগ আর সব অপেক্ষাকে হার মানিয়ে গত ২ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের মুছিদাহ গ্রামের আবু জাফর মণ্ডলের ছেলে নায়েব মন্ডল।
মুহূর্তেই পুরো পৃথিবী যেন ভেঙে পড়ে মায়ের বুকে। যে সন্তানকে বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করলেন, সেই সন্তানই এবার ছুঁয়ে দিল চিরবিদায়ের নিস্তব্ধতা।
নায়েব আলীর মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। যারা কখনো তাকে কাছ থেকে দেখেনি, তারাও চোখের জল আটকে রাখতে পারছেন না। মায়ের আত্মত্যাগ, সন্তানের প্রতি অশেষ ভালোবাসা এবং পরিণতিতে এমন হৃদয়বিদারক বিদায়— এ ঘটনা চিরকাল মানুষের হৃদয়ে রয়ে যাবে এক অনির্বচনীয় বেদনার স্মৃতি হয়ে।
মন্তব্য করুন