

আক্রমণাত্মক ব্যাটিং স্টাইল আর দ্রুতগতির বোলারদের সামনে নির্ভীক ভঙ্গিমা—এই দুই বৈশিষ্ট্যই সাবেক ইংলিশ ব্যাটার রবিন স্মিথকে ইংলিশ ক্রিকেট ভক্তদের মনে বিশেষ জায়গা করে দেয়। কিন্তু সেই ‘আইকনিক’ ডানহাতি ব্যাটার আর নেই। অস্ট্রেলিয়ার পার্থে নিজ অ্যাপার্টমেন্টে সোমবার আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২।
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬—আট বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে স্মিথ ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ৬২টি টেস্ট। রান সংগ্রহ করেছেন ৪২৩৬, গড় ৪৩.৬৭; এর মধ্যে আছে ৯টি সেঞ্চুরি। তার ব্যাটিংয়ের পরিচয় ছিল স্পষ্ট—ফ্রন্ট-ফুটে দাঁড়িয়ে স্কয়ার কাট। সেই শটটিকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও নির্ভুল শট হিসেবে বিবেচনা করতেন বিশেষজ্ঞরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার তিনটি টেস্ট সেঞ্চুরি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অ্যামব্রোস, মার্শাল, ওয়ালশদের আগুনঝরা বোলিং সামলে লড়াই করার জন্য তিনি ইংল্যান্ড সমর্থকদের কাছে ছিলেন সাহসের প্রতীক।
শেন ওয়ার্ন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভূত হওয়ায় স্মিথের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায়। ১৯৯৩ অ্যাশেজে ওয়ার্নের বিরুদ্ধে দুর্বলতার কারণে ১৮ মাস পর অস্ট্রেলিয়া সফরের দল থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। ব্যাপারটা অদ্ভুত—যার বোলিং তার ক্যারিয়ার সংকটে ফেলেছিল, সেই ওয়ার্নের সঙ্গেই পরে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। সেই সম্পর্কই শেষ দিকে ওয়ার্নের হ্যাম্পশায়ারে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছিল।
২০১৯ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী “The Judge: More Than Just A Game”-এ স্মিথ খোলাখুলি জানান তার দীর্ঘদিনের অ্যালকোহল-সংক্রান্ত সংগ্রামের কথা। মাত্র শেষ সপ্তাহেই তিনি পার্থে অ্যাশেজ টেস্টে উপস্থিত ছিলেন এবং জানিয়ে গিয়েছিলেন তার সুস্থতার লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) স্মিথকে স্মরণ করে জানায়—“তিনি সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলারদের সামনেও অটল আত্মবিশ্বাস নিয়ে দাঁড়াতেন। সেই দৃঢ়তা ইংল্যান্ড সমর্থকদের বহু স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিয়েছে,”
বলেছেন ইসিবি চেয়ারম্যান রিচার্ড থম্পসন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন—“এজবাস্টনের ১৬৭* তাকে সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এক ব্যাটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। দেশ ও ক্লাব—দুই ক্ষেত্রেই তার অবদান অপরিসীম।”
দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে জন্ম নেওয়া স্মিথের ক্রিকেট যাত্রা শুরু হয়েছিল নিজের বাড়ির পেছনের বিশেষভাবে তৈরি করা নেটে। সেখানে ব্যারি রিচার্ডস, মাইক প্রোক্টরের মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে নেট করেছিলেন তিনি। পরে সেই রিচার্ডসের সুপারিশেই স্মিথের পথ খুলে যায় হ্যাম্পশায়ারে—যেখান থেকে উঠে আসে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ভিত্তি।
১৯৯৬ জানুয়ারিতে কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছিল তার শেষ টেস্ট। মাত্র ৩২ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে। এবার চিরতরে বন্ধ হলো তার জীবনের অধ্যায়ও।
মন্তব্য করুন