রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ট্রাকের ধাক্কায় থেমে গেল শিশু সাদের জীবন

ঘটনাস্থলে ট্রাক। ছবি : কালবেলা
ঘটনাস্থলে ট্রাক। ছবি : কালবেলা

রাজশাহীর লিলি হল মোড়। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার ব্যস্ততম সময়। বাজারের রিকশা, অফিসগামী মানুষের ভিড় আর স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের কোলাহলের ভেতর হঠাৎই এক মুহূর্তে থেমে যায় ১০ বছরের এক শিশুর জীবন।

বাবা লিয়াকত আলী লিটনের মোটরসাইকেলের পেছনে বসে রাজশাহী নগরীর আম চত্বর থেকে কাশিয়াডাঙ্গার দিকে যাচ্ছিল সাদ। একটা সাধারণ দিন, একেবারে স্বাভাবিক পথচলা। কে জানত, কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানই তার শেষ যাত্রা বয়ে আনবে।

প্রত্যক্ষদর্শী সোহেল রানা বলেন, সাধারণ দিনের সেই পথটা হঠাৎই বদলে যায় তীব্র এক শব্দে। পেছন দিক থেকে আসা একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা এতটাই প্রবল ছিল যে ছিটকে পড়ে যায় ছোট্ট সাদ।

হয়তো ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করেছিল, হয়তো বাবার ডাকের অপেক্ষায় ছিল— কিন্তু তার আর ফিরে আসা হয়নি। আমার চোখের সামনেই ট্রাকের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে লিলি হল মোড়ের পথেই শেষ হয় তার দশ বছরের স্বপ্ন, হাসি আর খেলাধুলার দুনিয়া।

তিনি আরও বলেন, এভাবে ছোট্ট শিশু চলে যাবে একটি ট্রাকের চাকার নিচে, তা মেনে নেওয়া যায় না। শিশুটি যেখানে মারা গেছে আমরা সেখানে গোলচত্বর করে দিয়েছি, যাতে করে আর কোনো মানুষকে এভাবে প্রাণ দিতে না হয়।

বাবা লিয়াকত আলী লিটন— একজন এনজিও কর্মী, স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মানুষের ভিড়ের মাঝখানে। যে ছেলেটাকে একটু আগে বুকের কাছে নিয়ে গন্তব্যে ফেরার কথা ভাবছিলেন, সেই ছেলেটাই তখন নিথর। গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটে, সেখানেই ছিল সাদের ছোট বেলার বন্ধু, স্কুল, দুষ্টুমি— সবকিছু। বাবার কর্মক্ষেত্রের কারণে রাজশাহীতে বসবাস। তবে নীলফামারীর সেই গ্রামই হয়তো অপেক্ষা করছে তার নীরব প্রত্যাবর্তনের।

কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী কালবেলাকে জানান, দুর্ঘটনায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। ট্রাকটি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। আমরা সেটি শনাক্তের চেষ্টা করছি।

আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।

একটি ট্রাক, একটি অসাবধান ধাক্কা— আর পুরো পরিবার ডুবে গেল শোকের গভীরতায়। রাজশাহীর একটি ব্যস্ত মোড়ের দুপুর যেন রেখে গেল অদৃশ্য এক স্মারক : শহরের রাস্তায় আমাদের প্রতিটি তাড়াহুড়া, প্রতিটি অসতর্ক মুহূর্ত কত জীবন কেড়ে নিতে পারে।

সাদের বয়স মাত্র দশ। তার হাতে এখনো খেলনা থাকার কথা ছিল, স্কুলব্যাগে রঙিন খাতা থাকার কথা ছিল। অথচ আজ সেই দুই হাত আর কিছুই ধরে না। শহরের আকাশে ভেসে বেড়ানো হর্নের শব্দের ভেতরও যেন শোনা যায় তার থেমে যাওয়া শৈশবের নিঃশব্দ কান্না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় প্রার্থনার আহ্বান আমিনুল হকের

সীমান্তে হত্যা বন্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান চাকসুর

বেগম খালেদা জিয়া কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি : মঈন খান

গহরপুর জামিয়ার ‘পথিকৃৎ শিক্ষক সম্মাননা’ বৃহস্পতিবার

নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে যে পরামর্শ দিলেন তথ্যসচিব

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ডাকসু নেত্রীর পোস্ট, ছাত্রদলের প্রতিক্রিয়া

বিশ্বকাপ ধরে রাখার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী আর্জেন্টিনার ‘বাজপাখি’

ময়মনসিংহে ৮ দলের সমাবেশ ঘিরে তৎপর প্রশাসন

অনুমতি ছাড়া স্টেডিয়ামে হেলিকপ্টারের অবতরণ, সমালোচনার ঝড়

সাপ দেখে ভয়ে টেবিলে উঠে পড়লেন ব্যাংক কর্মীরা

১০

গোলাপ শাহ্ মাজারের দান বাক্সে মিলল সাড়ে ৫৬ লাখ টাকা

১১

প্রবাসীরা কতদিন পর্যন্ত ফোন রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই চালাতে পারবেন?

১২

বিপিএল নিলামের পরও নোয়াখালীর চমক

১৩

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার

১৪

চট্টগ্রামে শ্রমিক সমাবেশ / ‘সরকারের বোধোদয় না হলে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে’

১৫

স্কুলে ভর্তিতে মাউশির জরুরি বিজ্ঞপ্তি

১৬

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তিন ম্যাচে বাফুফের আয় ৪ কোটি

১৭

খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির দোয়া মাহফিল

১৮

গণভোটের মাধ্যমে ভোটের চরিত্র পাল্টাতে হবে : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

১৯

কাপ্তাই লেকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ নিধন, সরঞ্জামসহ নৌকা জব্দ

২০
X