

রাজশাহীর লিলি হল মোড়। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার ব্যস্ততম সময়। বাজারের রিকশা, অফিসগামী মানুষের ভিড় আর স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের কোলাহলের ভেতর হঠাৎই এক মুহূর্তে থেমে যায় ১০ বছরের এক শিশুর জীবন।
বাবা লিয়াকত আলী লিটনের মোটরসাইকেলের পেছনে বসে রাজশাহী নগরীর আম চত্বর থেকে কাশিয়াডাঙ্গার দিকে যাচ্ছিল সাদ। একটা সাধারণ দিন, একেবারে স্বাভাবিক পথচলা। কে জানত, কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানই তার শেষ যাত্রা বয়ে আনবে।
প্রত্যক্ষদর্শী সোহেল রানা বলেন, সাধারণ দিনের সেই পথটা হঠাৎই বদলে যায় তীব্র এক শব্দে। পেছন দিক থেকে আসা একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা এতটাই প্রবল ছিল যে ছিটকে পড়ে যায় ছোট্ট সাদ।
হয়তো ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করেছিল, হয়তো বাবার ডাকের অপেক্ষায় ছিল— কিন্তু তার আর ফিরে আসা হয়নি। আমার চোখের সামনেই ট্রাকের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে লিলি হল মোড়ের পথেই শেষ হয় তার দশ বছরের স্বপ্ন, হাসি আর খেলাধুলার দুনিয়া।
তিনি আরও বলেন, এভাবে ছোট্ট শিশু চলে যাবে একটি ট্রাকের চাকার নিচে, তা মেনে নেওয়া যায় না। শিশুটি যেখানে মারা গেছে আমরা সেখানে গোলচত্বর করে দিয়েছি, যাতে করে আর কোনো মানুষকে এভাবে প্রাণ দিতে না হয়।
বাবা লিয়াকত আলী লিটন— একজন এনজিও কর্মী, স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মানুষের ভিড়ের মাঝখানে। যে ছেলেটাকে একটু আগে বুকের কাছে নিয়ে গন্তব্যে ফেরার কথা ভাবছিলেন, সেই ছেলেটাই তখন নিথর। গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটে, সেখানেই ছিল সাদের ছোট বেলার বন্ধু, স্কুল, দুষ্টুমি— সবকিছু। বাবার কর্মক্ষেত্রের কারণে রাজশাহীতে বসবাস। তবে নীলফামারীর সেই গ্রামই হয়তো অপেক্ষা করছে তার নীরব প্রত্যাবর্তনের।
কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী কালবেলাকে জানান, দুর্ঘটনায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। ট্রাকটি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। আমরা সেটি শনাক্তের চেষ্টা করছি।
আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।
একটি ট্রাক, একটি অসাবধান ধাক্কা— আর পুরো পরিবার ডুবে গেল শোকের গভীরতায়। রাজশাহীর একটি ব্যস্ত মোড়ের দুপুর যেন রেখে গেল অদৃশ্য এক স্মারক : শহরের রাস্তায় আমাদের প্রতিটি তাড়াহুড়া, প্রতিটি অসতর্ক মুহূর্ত কত জীবন কেড়ে নিতে পারে।
সাদের বয়স মাত্র দশ। তার হাতে এখনো খেলনা থাকার কথা ছিল, স্কুলব্যাগে রঙিন খাতা থাকার কথা ছিল। অথচ আজ সেই দুই হাত আর কিছুই ধরে না। শহরের আকাশে ভেসে বেড়ানো হর্নের শব্দের ভেতরও যেন শোনা যায় তার থেমে যাওয়া শৈশবের নিঃশব্দ কান্না।
মন্তব্য করুন