

‘গত বছর বন্যা অওনের কারণে ক্ষেতে পইল জইম্মা ফসলের লাইগ্যা ভালা অইছে। পুহের আক্রমণ কম অইছে, মেঘও (বৃষ্টি) ঠিকমতন অইছে, এল্লাইগ্যা এইবার আল্লাহর রহমে ভালা ধান অইছে। গত ৩০ বছরেও এইরহম ভালা ধান অইতে দেহি নাই। অহন যদি ভালা দাম পাই তইলে আমরার কষ্টও সার্থক অইবো।’
আমন ধানের ভালো ফলন পেয়ে মুখে সন্তুষ্টির হাসি নিয়ে কথাগুলো বলেছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকার কৃষক আবদুল কাদের। এ বছর তিনি ৭১ শতক জমিতে আমন আবাদ করেছিলেন। এ বছর ফলন ভালো পাওয়ায় খুশি তিনি।
এবার এই উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা অনেক বছর পর এবার আমন ধানে অত্যধিক ফলন পেয়েছে। যার ফলে উপজেলার কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে স্বস্তি ও আনন্দ। এ চিত্র প্রতিটি কৃষক পরিবারের।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর অনুকূল আবহাওয়া, সময়মতো বৃষ্টি এবং আধুনিক জাতের ধান আবাদ করায় ফলন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ ছাড়া গত বছর বন্যা হওয়ায় জমিতে পলি জমে জমি উর্বর হয়েছে। যার ফলে এবার ফলন ভালো হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও আমন আবাদ বেশি হয়েছে। এতে কৃষকরা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। এ বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৪৬৫ হেক্টর। তবে আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৪৬৭ হেক্টর জমিতে।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা কেউ ধান কাটছেন। কেউ কেউ জমিতেই ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন। কেউ কেউ মাড়াই শেষে ধান ঘরে তুলছেন। এ মোক্ষম সময়ে নারী পুরুষ মিলেমিশে ঘরে ফসল তোলার কাজ করছেন। এ চিত্র যেন কৃষি নির্ভর বাংলার চিরায়ত রূপ।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত বছরের বন্যার ফলে জমিতে পলি জমে জমি উর্বর হওয়ায় ধান ভালো হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এবং এ বছর ফসলে রোগবালাই কম হওয়ায় আমানের উৎপাদন খরচও তুলনামূলক কম হয়েছে। ফলে ভালো ফলন পাওয়ায় এবং ভালো দাম পেলে লাভের পরিমাণও বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।
কৃষক মোবারক হোসেন এ বছর ৫৬ শতক জমিতে আমন আবাদ করেছিলেন। অধিকাংশ জমির ধান তিনি ঘরে তুলেছেন। তিনি বলেন, এ বছরের মতো এত কম খরচে ধান উৎপাদন আগে কখনো হয়নি। অনেক বছর পর এবার ভালো ধান পেয়েছি। এবার ধানের ফলনে আমরা খুব খুশি।
উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের বেজুরা এলাকার কৃষক ফারুক মিয়া বলেন, আমাদের মাঠে ধান কাটা শুরু হয়েছে। আমি এবার দুই বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। মাঝখানে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল, তবে কৃষি অফিসের পরামর্শে তেমন একটা সমস্যা হয়নি। এবার খুবই ভালো ফলন হয়েছে। বেশি উৎপাদনে আমরা খুশি।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মুখলেছুর রহমান কালবেলাকে বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর অন্যান্য জাতের তুলনায় ব্রি ধান১০৩ এর ফলন সবচেয়ে বেশি হয়েছে। কৃষকরা আগামী বছর এই জাতটি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এখন ফসল সংগ্রহ ও মাড়াইয়ের অনুকূল পরিবেশ থাকায় আমাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। ফসল ঘরে তুলতে কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মন্তব্য করুন