নদীমাতৃক বাংলাদেশে কালের পরিক্রমায় যুগযুগ ধরে পরিবর্তন হচ্ছে নদীর গতিপথ। জনমানবের আভাসস্থলে তৈরি হচ্ছে নদী আর একপাশে বালুচর হয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন জনপদ। নদীর গতিপথ এদিক-ওদিক হলেও থেকে যায় কিছু স্মৃতি যা কালের সাক্ষী হয়ে থাকে। তেমনি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে কালের পরিক্রমায় হুড়াসাগর নদী গতিপথ পরিবর্তন করেছে। নদীর তীরে বালুর চর হওয়ায় ছোট ছোট বাড়িঘর তৈরি করছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া-চর বাঁশবাড়ীয়া এলাকার মাঝামাঝিতে নদীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে পানি খাওয়ার পুরোনো একটি কূপ। যার গভীরতা প্রায় ৬০ ফুট ও লম্বা ৮ ফুট চওড়া।
স্থানীয়রা জানান, বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৬ সালে কূপটি তৈরি করে। ওই সময়ে চারপাশে শত শত বাড়িঘর ছিল এবং প্রায় ২৫০টির বেশি পরিবারের মানুষ কূপের পানি ব্যবহার করত। কিন্তু নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় বাড়িঘরগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তবে কূপটি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবার কেউ কেউ বলছেন এই কূপের বয়স ২০০ বছরের মতো হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া-চর বাঁশবাড়ীয়া গ্রাম দুটিকে ভাগ করে ফেলেছে হুরাসাগর নদী। নদীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে পানি খাওয়ার পুরোনো একটি কূপ। এলাকাবাসী বলেন কূপটির গভীরতা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ফুট ও লম্বা ৮ ফুট চওড়া। অযত্নে পড়ে রয়েছে কূপটি। কূপটির ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য ও পুরোনো স্থাপনা হিসেবে টিকে থাকে এরজন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা চান এলাকাবাসী।
কূপটি নিজেদের জায়গায় করে দাবি করে মোকলেসুর রহমান লেখন নামে স্থানীয় একজন বলেন, ১৯৩৬ সালে আমার দাদা সোমছের সরকারের জায়গায় কূপটি করা হয়। আশপাশে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না থাকায় কূপটি করা হয় এবং ওই কূপ থেকে প্রায় ২৫০টির বেশি পরিবার পানি ব্যবহার করত। পরে হুড়াসাগরের নদীর পেটে বাড়িঘর ও কূপটি চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নদীর পথ আবার পরিবর্তন হয়ে চর জেগে উঠেছে। এ জন্য ফসলি মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ও আশপাশে আবার বাড়িঘর তৈরি হয়েছে। কূপটি সংরক্ষণ করে রাখার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।
উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মো. জুলফিকার আজাদ বলেন, জন্মের পর থেকেই কূপটি দেখছি। কূপটি ঘিরে রয়েছে নানা ধরনের ভয়ংকর গল্প। তবে সেসব গল্পের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন আছে বলে জানান এই ব্যক্তি।
অত্র এলাকার শফিকুল ইসলাম জানান, কূপটি ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ সরকার তৈরি করেছে। বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের মতিয়ার রহমান সরকারের বড় চাচা কলিমুদ্দিন সরকারকে ব্রিটিশ সরকার কূপটি বানিয়ে দেয়। ১৯৭১ সালে বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে এটির আর কোনো সংস্কার করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, কূপটির পাশে ফইমুদ্দিন সরকার, মফিজ মন্ডল, ইব্রাহিম সরকারসহ আরও অনেকের বাড়ি ছিল। কূপটি মৃত মতিয়ার রহমান সরকারের বাবা মৃত সোমছেরের নিজস্ব সম্পত্তির ওপরে ছিল বলে জানান তিনি।
রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আখিরুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই কূপটি দেখছি। তবে সরকারের কাছে দাবি কূপটি প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে রাখা হোক।
মন্তব্য করুন