ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুস ও হয়রানির অভিযোগ করায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে তদন্তের কথা বলে গ্রাহককে ডেকে নিয়ে ব্যাংকের মধ্যে আটকে রেখে বহিরাগতদের দিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটে।
সোমবার (১৮) সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার রামদিয়া কৃষি ব্যাংকে এ ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্য মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
মারধরের শিকার ষাটোর্ধ্ব কৃষক দেনায়েত সরদার উপজেলার ফুকরা গ্রামের বাসিন্দা। এ সময় তার সঙ্গে থাকা ছেলে তাকবীর সরদার (২৭) ও জামাতা মোতাকাব্বির মুন্সীকেও (২৫) মারধর করা হয়।
পরে পুলিশের উপস্তিতে ব্যাংকের প্রধান ফটক আটকানো অবস্থায় তাদের কাছ থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দেয়।
মারধরের শিকার কৃষক দেনায়েত সরদার বর্তমানে উপজেলা ১০০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ চিকিৎসাধীন। তিনি জানান, গত এক মাস আগে গাভি মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের জন্য ৩ লাখ টাকা ঋণ নিতে রামদিয়া কৃষি ব্যাংকে প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দেওয়া হয়। ২০ আগস্টে ব্যাংকের তদন্তকারী অফিসার (আইও) রাফিজুল ইসলাম ওই কৃষকের বাড়িতে সরেজমিনে তদন্তে যান। পরে মিষ্টি খাওয়া বাবদ কিছু টাকা দাবি করেন। দেনায়েত সরদার বাড়তি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ‘দায় দেনার’ কারণ দেখিয়ে ঋণের আবেদন বাতিল করে দেন।
এ বিষয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর কৃষক দেনায়েত সরদার বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগ সেলে ইমেইলের মাধ্যমে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সোমবার গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক শাখা ব্যবস্থাপক আবদুল আজিজ ও তার সহযোগী অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য রামদিয়া কৃষি ব্যাংকে যান।
তদন্ত চলাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করায় হুমকি-ধামকিসহ ৫০ লাখ টাকার মানহানি মামলার ভয় দেখান তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং সেই কথার প্রতিবাদ করতে গেলে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ইলিয়াস হোসেনের পূর্ব থেকে ঠিক করে রাখা লোকজন অতর্কিতভাবে হামলা করে। একপর্যায়ে তারা ব্যাংকের সব গেট ও দরজা লাগিয়ে এবং ব্যাংকের সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে অভিযোগকারী ও তার ছেলে, জামাতাকে উপর্যপুরি কিলঘুষি, লাথি ও ফ্লোরে ফেলে পা দিয়ে পিষতে থাকে। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রামদিয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিরীহ কৃষক এবং তার লোকজনের কাছ থেকে সাদা কাগজে জোর করে স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে কাশিয়ানী থানার রামদিয়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোনো অভিযোগ না থাকায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইলিয়াস হোসেন ঘুস চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ঋণ চেয়ে না পেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ওই কৃষক। অভিযোগের তদন্ত কমিটি ব্যাংকে আসলে বাদীপক্ষের লোকেরা অশোভন আচরণ করেন। পরে গ্রাহকরা এর প্রতিবাদ করে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ব্যাংকের গেট-দরজা লাগিয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে তাদেরকে উদ্ধার করে।’
গোপালগঞ্জ কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক শাখা ব্যবস্থাপক ও অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ মারধরের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘তদন্তের বিষয়টি ছিল তুচ্ছ একটি ঘটনা।
মন্তব্য করুন