

বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) আসনে দলীয় প্রাথমিক মনোনয়ন আবেদন ফরমে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বার্ষিক আয় দেখিয়ে সর্বত্র আলোচনার সৃষ্টি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী ইয়ামিন এইচ এম ফারদিন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে তার দাখিল করা হলফনামায় চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। হলফনামায় ৩২ বছর বয়সী ইতালি প্রবাসী এই প্রার্থী তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন প্রায় এক কোটি টাকা।
একই ব্যক্তির দুই নথিতে বার্ষিক আয়ের বিশাল ব্যবধান নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। একই ব্যক্তির আয়ের দুই ধরনের তথ্যের বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। ফলে বিতর্ক এখনো থামেনি।
এর আগে, দলীয় প্রাথমিক মনোনয়ন আবেদন ফরমে ইয়ামিন এইচ এম ফারদিনের বার্ষিক প্রায় হাজার কোটি টাকা আয়ের তথ্য নিয়ে খবর প্রকাশ হয় দৈনিক কালবেলায়। সংবাদটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় রাজনীতি ও প্রবাসী মহলে শুরু হয় সমালোচনা। প্রশ্ন ওঠে, এত বিশাল আয়ের উৎস কী, ব্যবসা বৈধ কিনা এবং আদৌ এটি সম্ভব কিনা-তা নিয়ে। অনেকেই প্রবাসে তার ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন।
যদিও ফারদিন আগেই দাবি করেছেন, দলীয় প্রাথমিক মনোনয়ন আবেদন ফরমে দেওয়া তথ্যটি ছিল ভুল। পরে সংশোধিত আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন দাবি করলেও সেই আবেদনের নথি দেখাতে পারেননি বরিশালের মুলাদী উপজেলার পশ্চিম নাজিরপুর গ্রামের আমির হোসেন হাওলাদার ও মমতাজ বেগম দম্পতির ছেলে ইয়ামিন এইচ এম ফারদিন। তিনি প্রবাসী অধিকার পরিষদ ইতালি শাখার সভাপতি ও গণঅধিকার পরিষদ বরিশাল জেলা সহ-সভাপতি।
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া ইয়ামিন এইচ এম ফারদিনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ‘ইয়ামিন ট্রেডিং করপোরেশন’ থেকে ফারদিনের বার্ষিক আয় চার লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ টাকা। রেমিট্যান্সসহ অন্যান্য উৎস থেকে আসে ৯৪ লাখ ৮৯ হাজার ৫৪৪ টাকা। নগদ অর্থ রয়েছে ৪৪ লাখ ৬৯ হাজার ১৪৪ টাকা।
পাঁচটি ব্যাংকে জামানত রয়েছে মোট তিন হাজার ৬৩২ টাকা। ৬ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক পণ্য ও ৪ লাখ টাকার আসবাবপত্র, স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নিজের নামে ২৪ লাখ এবং স্ত্রীর নামে ১০ লাখ টাকার অকৃষি জমি, ইতালিতে ৭০ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি এবং নিজের ৪০ ও ও স্ত্রী জান্নাত আক্তারের কাছে ৩০ ভরিসহ স্বর্ণালংকারসহ মোট ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে।
এছাড়া পেশায় ব্যবসায়ী ফারদিন নিজেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী দাবি করেছেন। হলফনামার তথ্যে মোট সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হলেও প্রাথমিক আবেদনে উল্লেখ করা প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সঙ্গে এর তুলনা করা যায় না। এখানেই ওঠে প্রশ্ন-আয় কতটা স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য?
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন বরিশালের সম্পাদক রফিকুল আলম কালবেলাকে বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সম্পদ ও আয়ের তথ্য শুধু ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি ভোটারদের আস্থা ও প্রার্থীর বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ভুলবশত হোক বা অনিচ্ছাকৃত, আয়ের এমন বড় ব্যবধান প্রার্থীর বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রভাবিত করে।’
যদিও এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি ইয়ামিন এইচ এম ফারদিন। মনোনয়ন দাখিলের সময় তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো বক্তব্য নেই। যা মনে হয় লিখুন।’
মন্তব্য করুন