নাটোরের গুরুদাসপুরে পূর্নবাসন না করেই মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক নামে এক সচিব ছেলের বিরুদ্ধে তার মা মালেকা বেগমকে (৪৫) বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিনভর আবু বক্কর নিজে উপস্থিত থেকে তার লোকজন নিয়ে মালেকা বেগমের বসবাসের টিনশেডঘর ও গোয়ালঘর ভেঙে উচ্ছেদ করে দেন। মালেকা বেগম আবু বক্কর সিদ্দিকের বাবা চাঁদ মোহাম্মদ মন্ডলের তৃতীয় স্ত্রী। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামে।
অভিযুক্ত আবু বক্কর সিদ্দিক নিজেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রালয়ের অতিরিক্ত সচিব পরিচয় দিয়ে বলেন,তিন বছর আগে তাঁর বাবা মৃত্যুর আগে তৃতীয় মা মালেকা বেগমের বসবাসের ১১ শতক ভিটেমাটি তার নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে গেছেন। এখন নিজেদের বসবাসের জন্য পাকা স্থাপনা নির্মাণের প্রয়োজন হওয়ায় তৃতীয় মায়ের ঘরগুলো উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পাকা স্থাপনা নির্মানকাজ শেষ হলে সেখানে পুর্নবাসন করা হবে তাকে।
এদিকে বসবাসের একমাত্র আশ্রয়স্থলটি হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন মালেকা বেগম। ছেলের কুটকৌশল ও শক্তির কাছে অসহায় মা ন্যায়বিচার পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঘটনাস্থলের অদূরের ইদিলপুর বাজারের একটি ঘরে ওই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মালেকা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘অল্প বয়সে চাঁদ মোহাম্মদ মন্ডলের তৃতীয় স্ত্রী হয়ে আসেন তিনি। ২৬ বছরের দাম্পত্য জীবনে মৌসুমী খাতুন (২০) নামে এক মেয়ে রয়েছে তার। অনেক কষ্টে মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন তিনি। স্বামীর ভিটেমাটিতে ঘর তুলে দীর্ঘ বছর ধরে বসবাস করলেও ছেলে কোনোদিন খোঁজ-খবর পর্যন্ত রাখেনি।
মালেকা বেগমের অভিযোগ, গরু-ছাগল, হাঁস-মূরগী লালন পালন করে কষ্টে সংসার চালান তিনি। বিয়ের সময় তার নামে ১০ কাঠা ও পরে মেয়ের নামে ১০ কাঠা করে ২০ কাঠা কৃষি জমি রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছিলেন স্বামী চাঁদ মোহাম্মদ মন্ডল। সেই জমি বর্গা দিয়ে যে টাকা পান তা দিয়ে কোনমতে সংসার চালান তিনি। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর ৩ বছর পর এসে ভিটেমাটি নিজের দাবি করে বসতভিটে থেকে উচ্ছেদের কারনে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি। তাকে পুর্নবান না করেই উচ্ছেদের বিষয়টি অমানবিক বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মালেকা বেগম।
মালেকা বেগম আরো অভিযোগ করেন, গ্রামের শত শত মানুষের সামনে দিনভর তার বসতভিটা থেকে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হলেও ভয়ে এগিয়ে আসেনি কেউ-ই। তাছাড়া তার স্বামী চাঁদ মোহাম্মদের নামে খেতে ১৫/১৬ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। সে জমির ন্যায্য পাওনা তাকে বুঝে না দিয়ে উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলেও জানান মালেকা বেগম।
চাপিলা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (ইউপি সদস্য) নজরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ শুরু হওয়ার পর মালেকা বেগম তাঁর কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সেখানে গেলে আবু বক্কর সিদ্দিক তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।
তিনি জানান, তার বাবা চাঁদ মোহম্মদ অসুস্থ থাকার সময় ছেলে হয়েও পাশে দেখা যায়নি এই সচিব ছেলেকে। তৃতীয় স্ত্রী মালেকা বেগমই তখন স্বামীর দেখভাল করেছেন। ভিটেমাটিটি সচিবের হলেও পুর্নবান না করে উচ্ছেদ করা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম।
চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘তিনিও শুনেছেন ভিটেমাটিটি সচিবকে লিখে দিয়েছেন তার বাবা। তবে পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করাটা ঠিক হয়নি বলে জানান চেয়ারম্যান।
মন্তব্য করুন