গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০১:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মানব পাচারকারীর খপ্পরে রাজবাড়ীর ৬ যুবক মালয়েশিয়ায়

মানব পাচারকারীর খপ্পরে পড়া যুবকদের স্বজন। ছবি : সংগৃহীত
মানব পাচারকারীর খপ্পরে পড়া যুবকদের স্বজন। ছবি : সংগৃহীত

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের ৬ যুবক মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে মালয়শিয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের মানবেতর জীবনযাপনের ভিডিও চিত্র দেখে ও আকুতির কথা শুনে কান্নায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাদের মা-বাবা। এ ছাড়া তারা পাওনাদারদের চাপে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন।

তাদের অভিযোগ, মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার আয়ুব আলী মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তিন মাস আগে ওই যুবকদের মালয়েশিয়ায় পাঠায়।

এ বিষয়ে দফাদার আয়ুব আলীর বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে রাজবাড়ীর আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া ওই যুবকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে ও ইউপি দফাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসিসহ বিভিন্ন দপ্তরের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী যুবকরা হলেন গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিযনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী গফুর মন্ডল পাড়ার শফি শেখের ছেলে শিপন শেখ, আকমল শেখের ছেলে আশিক শেখ, শামসু শেখের ছেলে রোমান শেখ, কানচু মৃধার ছেলে সিরাজ মৃধা, ও মোশারফ শেখ, এবং ফজের শেখের ছেলে জহিরুল শেখ। তারা সবাই একই এলাকার বাসিন্দা।

আটকে পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের দাবি, স্থানীয় ইউপি দফাদার দালাল চক্রের সদস্য আয়ুব আলীর মাধ্যমে ৬ যুবককে মালয়েশিয়া নিয়ে যায় মানব পাচারকারী চক্র। মালয়েশিয়া নেওয়ার সময় তাদের ৩ জনের পরিবারের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং অপর ৩ জনের প্রত্যেকের পরিবারের কাছ থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেন আয়ুব আলী। পরে তাদেরকে মালয়েশিয়া একটি সন্ত্রাসী দলের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। মালয়েশিয়ার ওই সন্ত্রাসী চক্রটি সেখানে একটি রুমে বন্দি করে এবং তাদের পাসপোর্ট আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। এভাবে তারা যুবকদের পরিবারের কাছ থেকে আরও ১ লাখ করে টাকা আদায় করে।

এ বিষয়ে মালয়েশিয়া থেকে জহিরুল ও শিপনসহ ওই যুবকরা মোবাইলে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে জানায়, বাংলাদেশ থেকে আনা তাদের মতো আরও ৩৫ জনকে একই সঙ্গে ছোট একটি ঘরে বন্দি করে তাদের পাসপোর্টও হাতিয়ে নেওয়া হয়। ৩৫ জনকে এক সপ্তাহের খাবার হিসেবে ৩০ কেজি চাল, ৪ কেজি আলু, ২ কেজি পেঁয়াজ, এক প্যাকেট লবণ দেওয়া হয়। কোনো কিছু বললে মারধর করে। সেই সঙ্গে বলে বাড়ি থেকে টাকা পাঠাইতে বলে। টাকা পাঠালে তাদের কাজ ও ভালো খাবার দেওয়া হবে। তা না হলে নৌকায় করে তোদের সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হবে।

ভুক্তোভোগী সিরাজ মৃধার স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী ক্ষেত খামারে কাজ করে তিনটি ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসারটা ভালো চলছিল। আয়ুব দফাদার সরকারি পোশাক পরে প্রতিদিন আমার বাড়িতে এসে তাকে ফুসলিয়ে বিদেশে ভালো চাকরি দেওয়ার লোভ দেখাইয়া সহায় সম্বল বিক্রি করিয়ে ও দেনা করে ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নিয়া বিদেশ পাঠিয়েছে। এখন তাকে কোনো কাজ না দিয়ে আটকে রেখে আরও টাকা চাচ্ছে। আমি এখন কোথায় টাকা পাব? আমার ঘরে খাবার নেই। ছেলেমেয়েরা না খেয়ে স্কুলে যেতে পারছে না।

মোশাররফের বোন মুক্তা বেগম বলেন, শিশুকালে মা-বাবা মারা যাওয়ার পর এতিম হয়ে ছোট ভাইটাকে নিয়ে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছি। আয়ুবের প্রলোভনে পড়ে স্বামীকে অনুরোধ করে ধার করা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় তাকে বিদেশ পাঠিয়েছি। এখন আমার ভাই যখন মোবাইলে বলে বুবু আমারে বাঁচাও, না খেয়ে আছি। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। তখন কেমনে কি করি বুঝতে পারি না।

রোমান শেখের পিতা শামসু শেখ ও শিপনের বাবা শফিক শেখ জানান, আয়ুব দফাদারের প্রলোভনে ছেলেরা মালয়েশিয়া গিয়ে আটকে আছে। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ লাখ ৬৫ হাজার করে টাকা নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাজবাড়ী আদালতে মানব পাচার আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা এর বিচার চায়। এ ছাড়া ছেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে মানব পাচারকারী আয়ুবের শাস্তি নিশ্চিত করতে ইউএনও, থানা পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য লিয়াকত হোসাইন লিপু বলেন, আমাদের ওই দফাদার মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য এটা আমাদের জানা ছিল না। শুনেছি আয়ুব সামান্য বেতনে দফাদারি চাকরির আড়ালে অবৈধ মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত হয়ে দুইটি ট্রাক, অনেক জায়গা জমি ও বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। এলাকার যুবক ছেলেদের ফুসলিয়ে বিদেশে পাচার করে তাদের পরিবারকে নিঃস্ব করে অবৈধ টাকা কামিয়ে নিজে রাতারাতি বড়লোক হচ্ছে। এটা অনেক বড় অন্যায়। এর বিচার হওয়া দরকার।

অভিযোগের বিষয়ে দফাদার আয়ুব বলেন, আমি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠাই। মানব পাচার করি না। আমি যাদের পাঠিয়েছি তারা সবাই বই পেয়েছে এবং কাজও পেয়েছে। তারা এখন ভালো আছে।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, আয়ুব দফাদারের বিষয়ে কোর্টে মামলা হয়েছে। থানাতেও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যারা মন্দিরে হামলা করত তারা দেশে নেই : এটিএম আজহার

চট্টগ্রামে ‘সমুদ্র পরিবেশ রক্ষা ব্যালাস্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক প্রযুক্তিগত সেমিনার

‘দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না’

নিখোঁজের ছয় ঘণ্টা পর ডোবা থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার

মেঘনার তীরে দেখা মিলল রাসেল ভাইপারের, অতঃপর...

স্বামীর ছুরিকাঘাতে গার্মেন্টস কর্মী স্ত্রী নিহত

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে সাভারে ব্যাপক গণসংযোগ

খেলাধুলা চর্চার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে মাদকমুক্ত জাতি : আমিনুল হক

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না : সাইফুল হক

যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, বহু হতাহত

১০

বৃষ্টি আর কতদিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১১

ইলিয়াস কাঞ্চনের মৃত্যুর গুজব, যা বললেন ছেলে জয়

১২

শান্তিতে নোবেলজয়ী মারিয়াকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

১৩

দলে দলে ঘরে ফিরছে হাজারো গাজাবাসী

১৪

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

১৫

রাজধানী থেকে বগুড়া শহর আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

১৬

হেফাজতে ইসলাম সবার জন্য পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছে :  এ্যানি

১৭

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৮

রাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ

১৯

ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার উৎসর্গ করলেন মারিয়া

২০
X