সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে ব্যাংকে হিসাব খোলার নাম করে গৃহবধূর কাছ থেকে তালাকনামায় স্বাক্ষর নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাশুড়ি, ননদ ও ভাশুরের বিরুদ্ধে। রোববার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলার ডিডি শাহবাজপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, গত চার বছর আগে প্রস্তাবের মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের মৃত জহির হোসেনের মেয়ে আফসানার সঙ্গে শাহবাজপুর গ্রামের লতিফ প্রামাণিকের ছেলে উজ্জল হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয় উজ্জল-আফসানা দম্পত্তির। কিন্তু বিয়ের আগে থেকে উজ্জল জুয়া খেলা ও মাদকের আসক্ত ছিল। যার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত। আফসানাকে বিয়ে করার আগে ফুপাতো বোনকে বিয়ে করেছিল উজ্জল। মাদকাসক্ত উজ্জল, তার মা, বোন ও ভাইয়ের নির্যাতনে উজ্জলের প্রথম স্ত্রী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। শুধু উজ্জল নয়, তার আপন বড় ভাই ও বোনের বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনাও রয়েছে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ আফসানা বেগম বলেন, আমার বাবা মারা যাওয়ায় পাঁচ বোনকে নিয়ে মা অসহায় হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিয়ে জেনেও উজ্জলের সঙ্গে আমার বিয়ে দেওয়া হয়। উজ্জল জুয়া ও মাদকে মগ্ন থেকে কখনো মধ্যরাতে বা ভোর রাতে বাড়িতে ফিরত। কিছু বললে মারধর করত। কন্যার জন্মের তিন মাস পর মালয়েশিয়া চলে যায় উজ্জল। স্বামী বিদেশে গেলে শাশুড়ি, ননদ ও ভাশুর রহিম আমাকে মারধর করতো। অন্যদিকে উজ্জলের কাছে আমার ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দিত। উজ্জলও ফোন করে করে নানাভাবে আমাকে অমানুষিক নির্যাতন চালাত। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এ সংসার ত্যাগ করিনি। একদিন জানতে পারি, আমার ননদের সন্তানাদি না হওয়ায় আমাকে তালাক দিয়ে আমার মেয়েকে ননদের কাছে দিয়ে দেওয়া হবে।
গৃহবধূ আফসানা আরও বলেন, সর্বশেষ রোববার দুপুরে আমার নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য শাশুড়ি, ননদ ও ভাশুর এসে একটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বললে আমি নির্দ্বিধায় স্বাক্ষর দেই। এরপরে সন্ধ্যায় ভাড়া করা বারিক নামের একজন কাজী ও শাহবাজপুর গ্রামের বখাটে কথিত হুজুর এনামুল এসে বলেন, তোমার স্বামী তোমাকে তালাক দিয়েছে, তুমি তাকে তালাক দাও। এ কথা শোনার পর আমি অচেতন হয়ে যাই। প্রতিবেশীরা এসে মাথায় পানি দিলে কিছুটা সুস্থবোধ করে দেখি মেয়েকে আমার শাশুড়ি নিয়ে গেছে। মেয়েকে চাইতে গেলে মেয়েকে দেবেন না বলে জানায় তারা। পরে এখানে আমার আপন কেউ না থাকায় সুষ্ঠু সমাধানের জন্য থানায় অভিযোগ দায়ের করলে রাতেই আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দেন।
আফসানার শাশুড়ি রেনুকা বেগম ও ভাশুর আব্দুর রহিম বলেন, আমরা জোর করে তালাকনামায় স্বাক্ষর নিতে যায়নি। আফসানা নিজেই উজ্জলকে তালাক দিয়েছে। আমরা কেউ আফসানাকে মারধর করিনি বরং আফসানাই আমাদের সবাইকে মারধর করে।
কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহা রেজাউল ইসলাম বলেন, স্বামী বিদেশে থাকায় জোর করে তালাকনামায় স্বাক্ষর নেওয়ায় গৃহবধূ আফসানা সোমবার থানায় মামলা দায়ের করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন