আলোর ঝলমল করছে গোটা শহর। সন্ধ্যা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বাহারি আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে নগরীর প্রতিটি সড়ক, অলিগলি। নজরকাড়া নকশা আর রং-বেরঙের বাতি ও তোরণ দিয়ে সজ্জিত সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা। নগরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হাজারো মানুষের ভিড়।
সনাতন যুব ফোরামের মণ্ডপে গিয়ে দেখা গেছে, দেশের শিল্প সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে তুলে ধরা হয়েছে। হাতের তৈরি বাঁশ-বেতের বিভিন্ন কারুকাজ, শিল্পীদের তুলির স্পর্শে জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে হারিয়ে যাওয়া শিল্পের বিভিন্ন দিক। দেশীয় শিল্প রক্ষার্থে এবং শিল্পীদের মূল্যায়নের জন্যই এমন নকশা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সুনাতন যুব ফোরামের উপদেষ্টা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত জানান, ১৯৯৪ সাল থেকে তারা ধারাবাহিকভাবে দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছেন। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার দর্শনার্থী তাদের পূজা দেখতে আসেন। এবারের পূজা আয়োজনে তাদের প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অনেকে তাদের প্রতিমাকেই নগরের সবচেয়ে নজরকাড়া বলছেন।
দাড়িয়াপাড়া এলাকায় চৈতালী সংঘ, শ্রী শ্রী রক্ষা কালীবাড়ি এবং ঝুমকা সংঘেরও মণ্ডপ আছে। নগরের রামকৃষ্ণ মিশন ও আশ্রম, শ্রী শ্রী দুর্গামন্দির বালুচর মণিপুরি রাজবাড়ী, মাছুদিঘির পাড়, জামতলা, কাজলশাহ এলাকাতেও পা ফেলার জায়গা নেই। কাজলশাহ পুকুরপাড় ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মণ্ডপ। সেখানে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ছিল গীতা ও চণ্ডীপাঠের প্রতিযোগিতা। চলে ধর্মীয় গীতিনৃত্যের পরিবেশনা।
কাজলশাহ সার্বজনীন পূজা কমিটি থেকে জানা যায়, ২২ বছর ধরে এখানে পূজা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর পুরো পুকুরপাড় আলোয় ঝলমল করে। দর্শনার্থীরা এখানে ভিড় জমিয়ে ছবি ও সেলফি তুলছেন। পূজার প্রসাদ নিচ্ছেন সবাই।
নগরীতে পূজা উপলক্ষে প্রতিমা দর্শনে বের হওয়া বৃষ্টি পাল ও সঞ্চিতা রায় বলেন, দুর্গাপূজা এলে পুরো নগরীর সড়ক আলোতে ঝলমল করে ওঠে। আর সেই ঝলমলে নগরীতে প্রতিমা দেখতেই পরিবার নিয়ে বের হয়েছি। ছয়টি পূজামণ্ডপের আলোকসজ্জা ঘুরে দেখেছি রিকশায় চড়ে। লামা বাজার, দাড়িয়াপাড়া, রামকৃষ্ণ মিশন এবং দুর্গাবাড়ি মন্দিরে ঘুরেছি।
পূজাসংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর মহানগরে ১৫১টি সার্বজনীন এবং ১৭টি পারিবারিক পূজার আয়োজন করা হয়েছে। পারিবারিক আয়োজনের মধ্যে নগরের শেখঘাট এলাকায় লাল ব্রাদার্স পরিবারের দুর্গাপূজা ২১৭ বছরের পুরোনো।
লাল ব্রাদার্স পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ১৮০৬ সালে তাদের পূর্বপুরুষ ব্রজগোবিন্দ দাস এ পূজার সূচনা করেছিলেন। পূজাতে ভারতের লক্ষ্ণৌ ও রাজস্থান থেকে বাইজিরা আসতেন। তাদের অংশগ্রহণে চলত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশ ভাগের আগপর্যন্ত ভারতের ওডিশা থেকে পুরোহিতরা এসে তাদের পূজা পরিচালনা করতেন। এখন চাকচিক্যে ভাটা পড়লেও পূজা ঠিকই ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসছে। সিলেট শহরের প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, তাদের পরিবারের দুর্গাপূজাই এখন সবচেয়ে প্রাচীন।
সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন কালবেলাকে বলেন, পূজার নিরাপত্তায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। নির্বিঘ্নে যাতে পূজা উদযাপন করা যায় সেদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সচেষ্ট। যারা পূজা উদযাপনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ কালবেলাকে বলেন, তিন ধাপে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পূজার শুরু থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে ছিল, পূজা চলাকালে মণ্ডপের আশপাশে পুলিশ, র্যাব, আনসার রয়েছে। বিসর্জনের দিনও নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন মাথায় রেখে কেউ যাতে কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটাতে না পারে, সেদিকে পুলিশ সজাগ থাকবে।
মন্তব্য করুন