মৌলভীবাজার কারাগারে আদালতের নির্দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার হাজতি মো. রায়হান হোসেনের সঙ্গে এই মামলার ভুক্তভোগী নারীর বিয়ে সম্পন্ন করেছেন কারা কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) জেলা কারাগারে সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে ওই বিয়ে সম্পন্ন হয়।
হাজতি মো. রায়হান হোসেন সতীঝীরগাঁওয়ের কমলগঞ্জ থানার মৃত ছমির আলীর ছেলে। বিয়ের কনে কুলাউড়া থানার উচ্ছলা পাড়া গ্রামের মেয়ে।
রায়হান হোসেন কুলাউড়া থানার নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় গত ২০২২ সালের ৩০মে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে আসে।
মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের সুপার মো. মুজিবুর রহমান মজুমদার জানান, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলার মো. জুবায়েল হোসেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মলি আক্তারসহ ছেলে ও মেয়ে পক্ষের লোকজন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন হাইকোটের নির্দেশে ভিকটিম ও উভয় পরিবারের সম্মতিতে ইসলামী শরীয়া মতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তারা। তারপর ভিকটিম বর্তমানে তার নিজ বাড়িতে চলে যায়।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক তাদের বিয়ে হয়েছে। বিয়েতে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়েছে। পরিচয়ের সূত্র ধরে আসামি ও ভিকটিম মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
এক পর্যায়ে দুজনরে মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর রায়হানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন ভিকটিম। বর কমলগঞ্জ উপজেলার সতীঝীরগাও-এর ছমির আলীর ছেলে রায়হান হোসেন ২০২২ সালের ৩০ মে থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন বিচারাধীন মামলায় কারাগারে আছেন।
বিয়ের অনুষ্ঠানে জেল সুপার, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, হাজতীর মা ও দুই চাচা এবং ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমাকে জোর করে অপহরণ করে ধর্ষণ করে। পরে এর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। মামলার পর দুই পরিবারের আলোচনার মাধ্যমে আমি এ বিয়েতে সম্মতি জানাই। তখন মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে আমাদের বিয়ে হয়। এখন সবার কাছ একটাই চাওয়া যেন আমাদের দাম্পত্য জীবন যেনো সুখী হয়।
এলাকাবাসী জানান, পরিবারের সদস্য ও এলাকার কয়েকজন মুরব্বী। তারা নবদম্পতির সুন্দর জীবন কামনা করেন এবং মামলা দ্রুত নিস্পত্তিসহ তারা যাতে একসঙ্গে সংসার করতে পারেন এই প্রত্যাশা করছেন এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগীর আইনজীবী দীপক চন্দ্র ধর বলেন, ভুক্তভোগীর বাবা হাইকোর্টে এফিডেভিট করে আইনজীবীর মাধ্যমে জানান তার মেয়ের সঙ্গে আসামির রায়হান হোসেনের বিয়ে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ঠিক হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতির আদেশে কারা অভ্যন্তরে এ বিয়ে সম্পন্ন করা হয়।
জেল সুপার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে আসামি মো. রায়হান, তার সঙ্গে ওই নারীর আনুষ্ঠানিক বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওয়ানরেন্ট সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি এটি নারী ও শিশু ও নির্যাতন মামলা। আসামি রায়হান ২০২২ সালের ২২ মে থেকে আমাদের কারাগারে আছেন। অবশেষে আদালত যে রায় দিয়েছেন আমরা এতে ধন্যবাদ জানাই। এতে করে দুইটি মানুষের জীবন রক্ষা হয়েছে। নয়তো আসামির জীবন জেলেই কেটে যেতো।মেয়েটির জীবনেও নানা ধরনের সমস্যা হয়েছে। এখন মেয়েও ছেলেকে গ্রহণ করেছে, ছেলেও মেয়েকে গ্রহণ করেছে। এতে আমরা শুকরিয়া জানাই। এখন তাড়াতাড়ি যেন মামলাটির নিষ্পত্তি হয় সেজন্য আমরা আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবো।
মৌলভীবাজার জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মলি আক্তার বলেন, আমি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে এখানে এসেছি। মামলাটি এখনও বিচারাধীন। এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আদালত থেকে পাওয়া যাবে।
মন্তব্য করুন