দমনপীড়ন ও নির্যাতনে জোরপূর্বক নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কথা বলতে ফের কক্সবাজারের টেকনাফে আসে মিয়ানমার সরকারের ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। প্রথম দিন কথা-আলোচনা শেষে তারা মিয়ানমার ফিরে যান।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নৌপথে নাফনদী দিয়ে দুটি ট্রলারে টেকনাফ জেটিঘাটে পৌঁছায় মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের সাউ নাইংয়ের নেতৃত্বে ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
এ সময় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কর্মকর্তারা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গাড়িতে প্রতিনিধিদলকে আনা হয় টেকনাফের সড়ক ও জনপথের রেস্ট হাউসে নদী নিবাসে। এরপর রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।
সকাল ৮টার দিকে টেকনাফের ২৬-২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আসা রোহিঙ্গারা রেস্ট হাউসে আসা ১৮০ জন রোহিঙ্গার সাথে পৃথকভাবে দুটি দলে ভাগ হয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল তাদের সঙ্গে কথা বলে। প্রতিনিধিদল তাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসন ইস্যুসহ জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। তারা প্রথম দিন কথা বলা শেষে বিকেলের দিকে প্রতিনিধিদলটি মিয়ানমারে ফিরে যায়। আগামীকাল দ্বিতীয় দিনেও আলোচনা করার কথা রয়েছে।
মুচনী ২৬ নম্বর ক্যাম্পের মাঝি বজলুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের প্রত্যাবাসন ইস্যুতে তালিকাভুক্ত ও নতুন কিছু রোহিঙ্গার সাথে আজ জন্ম নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের সঠিক তথ্যটি যাচাই-বাছাই করেন। তারা এটা নিশ্চিত হতে চেয়েছেন, এক পরিবারের যদি ৫ সন্তান থাকেন এর মধ্যে থেকে কজন বাংলাদেশে ও কজন মিয়ানমারের জন্মগ্রহণ করেছে, সে বিষয়টি তারা নিশ্চিত হবার জন্য তারা কাজ করছেন। তবে সে দেশে ফেরত নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সরাসরি বিস্তারিত আলাপ করেনি তারা।
তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের জানিয়েছি, মিয়ানমার আমাদের দেশ আমরা নিজ দেশে অব্যশই ফিরে যাব, যদি আমাদের নাগরিক অধিকার ও ভিটামাটি ফেরতসহ রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা বলেন, মিয়ানমারের ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নৌপথে টেকনাফ জেটিঘাট পৌঁছলে নিরাপত্তা দিয়ে গাড়িযোগে তাদের টেকনাফের সড়ক ও জনপথের রেস্ট হাউসে আনা হয়। এরপর তারা পৃথকভাবে বিজিবির নদী নিবাস রেস্ট হাউসসহ গণপূর্ত বিভাগের রেস্ট হাউসে পৃথকভাবে ১৮০ জন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, জল ও স্থলপথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। যা ২০১৮ সালে দু’দেশের চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। আমরা জল ও স্থলপথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আমরা আশা করি, দুপক্ষের কথাবার্তার মাধ্যমে তাদের মধ্যে যে আস্থার সংকট রয়েছে, সেটি দূর হবে এবং অচিরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে, যার জন্য আমরা প্রস্তুত। তবে দুপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান হবে বলে আশা করছেন তিনি।
মন্তব্য করুন