প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জনগণকে আবারও তাদের সেবা করার সুযোগ দিতে ‘নৌকায়’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরেকবার সেবা করার সুযোগ দেবেন, সেই আহ্বান জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
এসব প্রধানমন্ত্রী আগামীর নির্বাচনে তার নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট প্রত্যাশা করে ওয়াদা চাইলে উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে সমম্বরে সাড়া দেন।
নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা উন্নয়ন দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই নৌকাই দেবে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট সরকার হবে, স্মার্ট অর্থনীতি হবে, স্মার্ট সমাজ হবে। জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা তৈরি করে দিয়ে যাব।’
আগামীতে নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সব সময় একটা বিষয়ে সবাইকে নজর রাখতে হবে- বিএনপি জানে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। তাদের নেতা নেই, মুণ্ডুহীন একটা দল বিএনপি। একজন পলাতক আসামি আর একজন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে। সেই দল এদেশে নির্বাচন হতে দিতে চায় না। দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি এভাবে গাড়িতে আগুন আর মানুষকে পোড়াতে চেষ্টা করে ওই হাত সেই আগুনে পুড়িয়ে দেবেন। উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবেন যাতে এদেশের মানুষের কোনো ক্ষতি করতে আর কেউ সাহস না পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখেছি সেই পোড়া মানুষগুলোর দুরবস্থা, চোখে পানি রাখা যায় না। ওদের মধ্যে মনুষত্ববোধ নেই। দেখেছি একজন পুলিশ সদস্যকে কীভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। যে গরিব মানুষ, চাকরি করত। কীভাবে সাংবাদিকদের বেদম পিটিয়েছে। কাজেই ওই ধরনের ঘটনা যেন আর ঘটাতে না পারে।’
বদলে যাওয়া বাংলাদেশে তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ৮ লাখ ৪১ হাজার গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর ও জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় একটি মানুষও যেন গৃহহীন না থাকে। ১০ কোটির ওপর মানুষ সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের উপকারভোগী। ১ কোটি মানুষকে পারিবারিক কার্ড দিয়ে সুলভে নিত্যপণ্য ক্রয় করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে সাড়ে ৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে চিকিৎসা সেবাসহ ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমরা তো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আমি শুধু এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে চাই, উন্নত জীবন দিতে চাই, দেশের মানুষ যদি ভালো থাকে সেটাই আমার পাওয়া। কেননা এদেশের মানুষের জন্য জাতির পিতা আজন্ম সংগ্রাম করেছেন এবং শেষে জীবনটাই দিয়ে গেছেন, তার মা-ভাই ও পরিবার পরিজনরা জীবন দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। আরও বক্তৃতা করেন, শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, শেখ সারহান নাসের তন্ময় প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
সমাবেশের আগে তিনি এখানে মোট ২৫৯৩ কোটি ব্যয়ে ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যার মধ্যে সমাপ্ত ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং বাকি ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। যেগুলোকে তিনি খুলনাবাসীর জন্য তার উপহার হিসেবে উল্লেখ করেন।
সমাবেশে যোগদানের আগে প্রধানমন্ত্রী খুলনা বিভাগের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।
জনসভাকে কেন্দ্র করে সমগ্র খুলনা মহানগরী যেন উৎসবের নগরী হয়ে ওঠে এবং প্রধানমন্ত্রীর আগমনে স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে দলে দলে সমাবেশে যোগ দেয়।
সকাল থেকে বিভিন্ন ব্যানার, প্লাকার্ড, ফেস্টুন হাতে নানা রঙের পোশাক পরে স্লোগানে স্লোগানে চারদিক মুখরিত করে দলে দলে লোক সমাবেশস্থল সার্কিট হাউস মাঠে আসতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র এলাকাটি এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
সূত্র : বাসস
মন্তব্য করুন