ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সারাদিন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়তে দেখা গেছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। বিকেল থেকে শুরু হয় তীব্র বাতাস। গেল কয়েক বছরে বাতাসের এমন গতির দেখা মেলেনি এই অঞ্চলে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন মিরসরাই। ফলে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো উপজেলা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এতে করে উপজেলার বিভিন্ন দোকানগুলোতে মোমবাতি বিক্রি বেড়েছে। তবে মোমবাতির কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে মিরসরাইয়ের বাজারগুলোতে।
জানা গেছে, দমকা ঝড়ো বাতাসে উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় ব্যাপক গাছপালা ভেঙে পড়েছে। অনেক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। পুরো এলাকা এখন মোমবাতির আলোই ভরসা। দোকানগুলোতে বিক্রি বেড়েছে মোমবাতির।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) রাতে উপজেলা সদরের ইসলামিয়া স্টোরে মোমবাতি কিনতে আসেন সময়ের আলো পত্রিকার মিরসরাই প্রতিনিধি সাদমান সময়। তিনি কালবেলাকে বলেন, 'আশেপাশে কয়েকটি দোকানে মোমবাতি কিনতে গিয়ে পাইনি। সবশেষে এই দোকানে এসে দুটি মোমবাতি পেয়েছি। ব্যবসায়িরা বলছে ২টার বেশি বিক্রি দেওয়া যাবে না।'
উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ আমবাড়িয়ার বাসিন্দা মেহেরাব হোসেন তামিম জানান, ‘এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারে চোরের দল। বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে থাকতে হচ্ছে।’
মিরসরাই পৌর সভার বাসিন্দা মাসুম খান কালবেলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সকাল থেকে আমাদের এইখানে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শুনেছি ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে অনেক জায়গায় গাছপালা ভেঙে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। জানি না কখন বিদ্যুৎ আসবে।’
সুফিয়ারোড়ের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যা থেকে এই পর্যন্ত শুধু মোমবাতি বিক্রি করছি। কেউ দুটি, কেউবা আরও বেশি মোমবাতি নিয়ে যাচ্ছে। তবে ২টার বেশি কাউকে দেওয়া হচ্ছে না।’
মিরসরাই বাজারে ইসলামিয়া স্টোরের সত্ত্বাধিকারী তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুপুর থেকেই বিদ্যুৎ না থাকায় হঠাৎ মোমবাতির চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেকেই বেশি করে নিতে চাইছেন। এভাবে একজনের কাছে সব বিক্রি করে দিলে অন্যরা পাবে না। কেন না এই মুহূর্তে সবাই ভুক্তভোগী। তাই এই চিন্তা করে একজনের কাছে ২টির বেশি বিক্রি করছি না।’
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম সাইফুল আহমেদ জানান, ‘উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আমবাড়িয়া এলাকায় তার ছিঁড়ে রেললাইনের উপর পড়েছিল। আমি টিম নিয়ে গিয়ে তার সরিয়েছি। আমাদের কর্মীরা মাঠে কাজ করছে। এত বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ কখন স্বাভাবিক হবে বলা মুশকিল।’
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নে গাছ পড়ে এক শিশু মারা গেছে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে গেছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে খুঁটি ভেঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে ঘূর্নিঝড়ে সতর্কতা সংকেত ৬ নম্বর থেকে ৩ নম্বরে নেমে এসেছে।’
মন্তব্য করুন