ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের খবর গণমাধ্যমে উঠে এলেও তার নিজ জেলা মাগুরায় এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। প্রার্থী হওয়ার খবর নিয়ে আলোচনা থাকলেও বিষয়টি নিয়ে ভাবছে না স্থানীয় আওয়ামী লীগ। দলটির নেতাকর্মীদের ধারণা, বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর মাগুরা-১ আসনে ও মাগুরা-২ আসনে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ।
গতকাল শনিবার তার পক্ষে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনার পর থেকে রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি তার একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে মাগুরা-১, মাগুরা-২ ও ঢাকা-১০ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় মাগুরার আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, মাগুরায় রাজনীতির মাঠে সাকিব আল হাসানের কোনো তৎপরতা নেই। তাকে স্থানীয় রাজনীতি বা এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে এর আগে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়নি। তবে মনোনয়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। মাগুরায় সাকিব আল হাসানের বাড়ি শহরের কেশব মোড়ের সাহাপাড়ায়। এটি মাগুরা-১ আসনের মধ্যে। সদর উপজেলার একটি পৌরসভা, ৯টি ইউনিয়ন ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর। এই আসনের আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বেশিরভাগই বর্তমান সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এই নেতাদের কাছে সাকিব আল হাসানের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করাটা অনাকাঙ্ক্ষিত।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ খান জানান, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি এক করার কারিগর মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান শিখর। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব থাকাকালীন সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাজনীতির পেছনে নিরবচ্ছিন্ন সময় দিয়েছেন। যে কারণে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে তার বিকল্প কেউ নেই।
এ বিষয়ে রোববার (১৯ নভেম্বর) সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, ‘সে যে মনোনয়ন ফরম কিনছে, এটা আমি, আমার সভাপতি বা দলের কেউ জানে বলে মনে হয় না। আমি ৩৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই সময়ে আমি কখনো সাকিব বা তার পরিবারের কাউকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে দেখিনি। তাদের এই দলের প্রতি কোনো কন্ট্রিবিউশন (অবদান) আছে বলেও মনে হয় না।’
একই ধরনের বক্তব্য শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমাউনূর রশীদ মুহিতের। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় তার (সাকিব আল হাসান) আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদও নেই। তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন।’
অন্যদিকে সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাগুরা-২ আসন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার। এ আসনে সাকিবের মনোনয়ন কেনাকে অপ্রত্যাশিত বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
শালিখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শ্যামল কুমার দে বলেন, ‘মনোনয়নের বিষয়টি নেত্রীর হাতে। নেত্রী যাকে প্রার্থী হিসেবে দেবেন তাকে নিয়েই আমাদের নির্বাচন করতে হবে। অন্য জায়গার কথা তো বলতে পারব না, এই শালিখা উপজেলায় রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে বা কারও সঙ্গে তার (সাকিব আল হাসান) কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমার জানা নেই।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ফাত্তাহ বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন যে কেউ কিনতেই পারেন। তবে দলের জন্য যারা দীর্ঘদিন ধরে নিবেদিতভাবে কাজ করেছেন, ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যাদের অবস্থান, এমন মানুষকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত।’
মন্তব্য করুন