প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আর বৌদ্ধ সভ্যতার ঐতিহাসিক স্থাপনাসমৃদ্ধ কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায় শালবন বিহারের লাল মাটির পাহাড়ি ভূমিতে আড়াই একর জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নব শালবন বৌদ্ধবিহার। চোখধাঁধানো এই স্থাপনা বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের একটি উপাসনালয়। বৌদ্ধধর্মের মানুষের এই উপসানালয়টি স্থানীয়দের কাছে নব শালবন বিহার বৌদ্ধমন্দির হিসেবেই পরিচিতি লাভ করছে। মন্দিরের পাশেই রয়েছে মেডিটেশন কেন্দ্র, শালবন বিহার বিদ্যালয়, এতিমখানা, পাঠাগার, জাদুঘর, সভাকক্ষ ও হোস্টেল কক্ষ।
দেশের সবচেয়ে বড় ধাতব বৌদ্ধমূর্তিটি দেখতে পাওয়া যাবে কুমিল্লার শালবন বিহারের এই নব বৌদ্ধমন্দিরে। শুধু দেশের নয়, পুরো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মধ্যে এটি একটি অন্যতম বৌদ্ধবিহার। ৩০ ফুট উচু ও ৬ টন ওজনের বুদ্ধের দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তিটি দূর থেকে সহজেই দর্শনাথীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। বুদ্ধের এত বড় ধাতবমূর্তি বাংলাদেশের আর কোনো বৌদ্ধমন্দিরে নাই। আড়াই একর জায়গাজুড়ে নির্মিত দুদিকের দুটি বিশাল সিঁড়ি মন্দিরের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
থাইল্যান্ড থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া ধাতব পদার্থে তৈরি মূর্তিটি বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনালয়ের ছাদের ওপর স্থাপন করায় মূর্তিটি অনেক দূর থেকে দেখা যায়। এ বিহার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বিহার বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। দৃষ্টিনন্দন এ বিহারকে ঘিরে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের পদচারণা বেড়েই চলেছে। নব শালবন বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠার পর কুমিল্লা পর্যটননগরী হিসেবে আরও একধাপ এগিয়েছে। তাই নব শালবন বিহার বৌদ্ধমন্দির এখন জেলার ১৬ হাজার বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ের পাশাপাশি একটি আকর্ষণীয় দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কোটবাড়ির নব শালবন বিহারের জন্য থাইল্যান্ডের একটি বৌদ্ধধর্মীয় ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দান করা হয় ধাতব পদার্থে তৈরি ৩০ ফুট উঁচু আকৃতির ও ৬ টন ওজনের দণ্ডায়মান এই বৌদ্ধমূর্তি। বৌদ্ধমূর্তিটি অনেক দূর থেকে অনায়াসে দেখা যায় এমন দর্শনীয় স্থানে ছাদের ওপর স্থাপন করা হয়েছে। এতে এ বিহারের নান্দনিক সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধি অনেক গুণ বেড়ে গেছে এবং দেশ-বিদেশের পর্যটকদের পদচারণায় আরও মুখর হয়ে উঠেছে নব শালবন বিহার ও আশপাশের দর্শনীয় এলাকা।
মূর্তিটি নব শালবন বিহারে স্থাপন করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট। এ উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাইল্যান্ড থেকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পন্ডিত ব্যক্তিসহ ৭৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেছিলেন।
জানা যায়, মূর্তিটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২০১৪ সালের ২৬ জুলাই ওই বিহারে আনা হয় এবং এ মূর্তি ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হবে বিধায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ স্টোর রেন্ট ও পোর্ট চার্জসহ প্রযোজ্য যাবতীয় শুল্ক/চার্জ শতভাগ মওকুফ করেছে।
কুমিল্লার সংঘরাজ জ্যোতি পাল মহাথের ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক শীলভদ্র মহাথের জানান, ধাতব পদার্থে তৈরি এমন মহামূল্যবান বৌদ্ধমূর্তি কক্সবাজারের রামু বা এ দেশের অন্য কোনো বিহার বা বৌদ্ধমন্দিরে নেই। তিনি জানান, সবকিছু মিলিয়ে কুমিল্লার এ নব শালবন বিহার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বিহার বা শান্তি প্যাগোডা (উপাসনালয়)।
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নব শালবন বিহার ও বাংলাদেশ বুদ্ধিষ্ট কালচারাল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। নব শালবন বিহার ক্যাম্পাসে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনালয়, মেডিটেশন সেন্টার, শালবন বিহার স্কুল ও এতিমখানা, লাইব্রেরি, শালবন বিহার জাদুঘর, সেমিনার হল ও হোস্টেল। স্কুলে প্লে-গ্রুপ থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীবিহারের এতিমখানায় থেকে লেখাপড়া করছে। এ বিহারে ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
মন্তব্য করুন