শত বছরের পুরোনো দিনাজপুর শহরের পুনর্ভবা নদীর ফুলতলা কেন্দ্রীয় শ্মশানঘাটে সার্বজনীন মন্দিরের নিজস্ব সম্পত্তিতে সরকারি অর্থায়নের কাজে বাধা দিয়েছে স্থানীয় চিহ্নিত একটি স্বার্থান্বেষী মহল। উল্টো মন্দির কমিটির বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করে হয়রানি করা হচ্ছে। জেলা শহরের ফুলতলা পুনর্ভবা নদীর ফুলতলা কেন্দ্রীয় শ্মশানঘাটের মন্দিরে এ ঘটনা ঘটেছে।
ফুলতলা শ্মশান ঘাট কেন্দ্রীয় কমিটির সুনিল চক্রবর্তী কালবেলাকে জানান, রাজনৈতিকভাবে ওই মন্দিরটি উদ্বোধনের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান থাকলেও কতিপয় স্বার্থন্বেষী মহল এটা বাস্তবায়নে বাধা দেয়।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মহোদয়সহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ওই জায়গাকে মন্দিরে জায়গা বলে স্বীকারও করেছেন।
তিনি আরও জানান, আমরা যদি প্রশাসনিক সহযোগিতা পাই মন্দিরটি নির্মাণ করা যাবে, অন্যথায় ঈদ-পরবর্তী সনাতন ধর্মীয় লোকজন ধর্মঘটসহ সমস্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌর বকসি কালবেলাকে বলেন, আমাদের অচিরে কাজটি শুরু করতে চাই। প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী কালবেলাকে বলেন, ‘সত্য কথা কী বলব, সত্য কথা বলে অনেকের কাছে শত্রু হয়ে যাব। জায়গাটা আসলে শ্মশানের আজ থেকে ৩৫ বছর আগে এখানে আমরা আসি তখন থেকে দেখছি এখানে শ্মশানের দাহ হয়—জায়গাটি শ্মশানেরই। আপনি যদি এখন আপনার খোলা জায়গায় বাচ্চাদের খেলতে দেন। পাড়ার সব বাচ্চারা খেলতে আসে আপনার বাড়ির উঠোনের জায়গাটাতে যেখানে বাচ্চারা খেলতে এসেছে সেটা কী খেলার মাঠ হয়ে যাবে।’
অন্য আর একজন নারী জানান, এটি সরকারি জায়গা, সরকার যদি শ্মশানকে দিয়ে দেয় সেটা সরকারের বিষয় আমরা সাধারণত জনগণ কী করতে পারি। এ এখানে টিপু ও জাকির জঙ্গল পরিষ্কার করে গাছ লাগায়। সেই গাছ বড় হলে কেটে নেওয়া হয় তখন ফাঁকা জায়গাতে পাড়ার ছোট ছোট ছেলেরা ফুটবল খেলা করে। একদিন দেখি শ্মশানের মাঠে মন্দিরে জন্য কাজ করা হচ্ছে, চারদিকে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। তারপর জানতে পাড়ি পাড়ার ছোট ছোট ছেলেদের সঙ্গে বড়রাও মিলে সেই মন্দির সংস্কার কাজের বাধা দিচ্ছে। তারা বলছে এটি আমাদের খেলার মাঠ। খেলতে দিতে হবে।
এ দিকে দিনাজপুর নাট্য সমিতির সভাপতি চিত্ত বাবু চিত্ত ঘোষ জানান, রাজা মহারাজার সময় থেকেই এখানে দাহ হয়ে আসছে আমাদের পরিবারের সকালেই এখানে আছেন, আমাদের দিনাজপুর জেলা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে গড়া একে অপরের পরিপূরক।
জানা যায়, তৎকালীন অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার কংগ্রেস দলের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন যোগেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। তিনি প্রয়াত হন ১৯৪৬-এর শেষ দিকে। যোগেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী ফুলতলা শ্মশান ঘাটের নামে জমিটি ক্রয় করেছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ফুলতলা কেন্দ্রীয় শ্মশানঘাটের সংস্কারের জন্য স্থানীয় এমপি হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট মন্দির নির্মাণের জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করার পরও ওই জায়গায় মন্দির নির্মাণকাজ করতে না পারায় ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মন্দির কমিটির নেতারা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সার্বজনীন মন্দিরের সম্পত্তি খেলার মাঠের আড়ালে ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করাসহ হয়রানি থেকে রেহাই পেতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মন্তব্য করুন