সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ ওরফে চিশতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নাশকতা ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ১২ জন নির্বাচিত কাউন্সিলরের করা অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মেয়রের আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর ) একটি প্রজ্ঞাপনে সাতক্ষীরা পৌর মেয়রের আসনটি শূন্য ঘোষণা করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আব্দুর রহমান। তাজকিন আহমেদ সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৌর বিএনপির সদস্যসচিব। এর আগেও স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে তাকে তিনবার বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে, একই সঙ্গে অন্য আরও দুটি পত্রে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র এর শূন্য পদে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন মেয়রের কার্যভার গ্রহণ করা পর্যন্ত পৌরসভার প্যানেল মেয়র (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মেয়র) কাজী ফিরোজ হাসানকে প্রশাসনিক আর্থিক ক্ষমতাসহ মেয়রের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়া এবং বিধিবহির্ভূতভাবে পৌরসভার ভাগ্যকূল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার সংলগ্ন জমিতে মার্কেট নির্মাণের দরপত্র আহ্বানসহ ১০ দফা অভিযোগ উল্লেখ করে পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদের বিরুদ্ধে ১২ কাউন্সিলর গত আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ শফিক উদ দৌলা; ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নূরজাহান এবং ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রাবেয়া পারভীন অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষে কোনো ধরনের প্রশাসনিক কিংবা রাজনৈতিক চাপ ছিল না উল্লেখ করেছেন।
তারা জানিয়েছেন, মেয়র তাজকিন আহমেদ তাদের কোনো কথা শুনতেন না। তাদের মূল্যায়ন করতেন না। তিনি কাউন্সিলরদের কোনো মতামত না নিয়ে একক সিদ্ধান্তে পরিষদ চালাতেন।
জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ৩ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পালকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ মতো তিনি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদকে ‘অনাস্থা প্রস্তাব’-এর পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যধারা কেন গ্রহণ করা হবে না, এ মর্মে এই চিঠি পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তাজকিন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের চিঠির জবাব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না দেওয়ায় কাউন্সিলর ফিরোজ হাসানকে (ভারপ্রাপ্ত মেয়র) অনাস্থা প্রস্তাবসম্পর্কিত সভা ডাকার আহ্বান জানান।
গত ১৮ অক্টোবর বেলা ৩টার দিকে সাতক্ষীরা পৌরসভা পরিষদকক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানের সভাপতিত্বে সভায় ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১১ জন উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত ১১ জনই অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। তবে ওই সভায় পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন না।
এদিকে, অনাস্থা প্রস্তাবটি পৌরসভার মোট সদস্য সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩৮ (১২) অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র এর আসনটি এতদ্বারা শূন্য ঘোষণা করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, আমি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে তিনটি পত্র পেয়েছি। প্রথম পত্র আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় পত্র প্যানেল মেয়র-১ কে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করা হয় এবং তিন নাম্বার এবং তৃতীয় পত্রে স্থানীয় সরকার পৌরসভা আইন, ২০০৯ এর ৩৩(২) ধারা অনুসারে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য সচিব নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বরাবর পত্র প্রদান করা হয়েছে। এখন, আইন ও বিধি অনুসারে ৯০ দিনের মধ্যে মেয়র পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্রে জানা যায়, তাজকিন আহমেদ পরপর দুবার মেয়র নির্বাচিত হন। প্রথম মেয়াদে দুটি নাশকতা মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করার পর ২০১৬ সালের ৪ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক চিঠিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহার হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৭০১ টাকা পানির বিল মওকুফ, হাটবাজার ইজারা বাবদ ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ৯৭০ টাকা বকেয়া, পৌর কর ১ কোটি ২৬ লাখ ২২ হাজার ৯৪৩ টাকা এবং ট্রেড লাইন্সেস ফি ১৪ লাখ ১৩ হাজার ৭২৬ টাকা মওকুফ করাসহ বিভিন্ন অনিময় ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০২২ সালের ১৫ জুন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ায় চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের এই আদেশ হাইকোর্টের নির্দেশে পরবর্তী সময়ে প্রত্যাহার হয়।
মন্তব্য করুন