জামালপুরে সরিষাবাড়ী উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত যমুনা নদী। এ নদীর করাল গ্রাসে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে শত শত বিঘা আবাদি জমি ও মানুষের বসতভিটা ভেঙে নদীগর্ভে চলে যায়। তাদের সেই দুঃখ দুর্দশা কাটতে না কাটতেই শুকনো মৌসুমে শুরু হয় বালু খেকোদের বালু উত্তোলনের দৌরাত্ম্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনাসহ এর শাখা নদীগুলোতে দিনরাত অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। ফলে রাস্তাঘাট, নদীর তীর, আবাদি জমি ও আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় সাড়ে ৪ বছর ধরে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কিছু নেতা,স্থানীয় এমপির প্রভাব খাটিয়ে এবং তার নিযুক্ত প্রতিনিধির প্রত্যক্ষ মদদে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে। অথচ, প্রশাসন সবকিছু জেনেও নির্বিকার। মাঝে মধ্যে এলাকাবাসীর অভিযোগে প্রশাসন যদিও অভিযান চালিয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিন ও যন্ত্রাংশ ভাঙচুরসহ উচ্ছেদ করে। তবুও কোনো কাজ হয় না। দু-চারদিন পর আবারো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে তারা।
দেখা গেছে, উপজেলার তারাকান্দি রেলক্রসিং, পাঁচতারা জেটিঘাট, পুরাতন ঘাট, স্থল, করিমদহ মোড় ও কাওয়ামারা এলাকা পর্যন্ত প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের অঙ্গরাজ্য গড়ে উঠেছে। আর এসব বালু উত্তোলন করছে রাজা মেম্বার, শাহ জামাল, আব্দুর রহিম, ফরহাদ, কালাম, শামীম, জোরন, জাকির, ফজু, মাসুদ, বাদশা, জিহাদ ও জাহিদসহ আরও অনেকেই।
আওনা গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, দলীয় লোকজনেই নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ বাধা দিতেও সাহস পায় না। বাধা দিতে গেলে উল্টো হয়রানি শিকার হতে হয়।
স্থল গ্রামের বাসিন্দা কালু মিয়া জানান, নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে গত দুই বছর হলো আমাদের বসতবাড়িসহ আবাদি এক বিঘা জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। এখন আমরা ভূমিহীন হয়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করছি। নদী থেকে বালি উত্তোলন বন্ধ হলেই নদীতে চর জাগবে, আর সেই চরে আমরা ধান, বাদাম, ভুট্টা চাষাবাদ করতে পারব। যদি বালু উত্তোলন বন্ধ না হয়। তাহলে আমার মত আরও অনেকেই নদীভাঙনে নিঃস্ব হবে।
বালু ব্যবসায়ী ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সহসভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, আমরা জানি, নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করা অবৈধ, আইনত অপরাধ। তারপরেও সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার লক্ষ্যেই এই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আমরা যদি এ বালুর উত্তোলন না করি, তাহলে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। আমরা বৈধভাবে বালু উত্তোলন করার জন্য সরকারের কাছে একটি বালুমহালের দাবি করছি।
অপরদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক বালু ব্যবসায়ী বলেন, আমরা রাজনীতি করি। আমাদের আর কোনো কর্ম নেই। এ বালু উত্তোলন যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমরা কী করে চলব। এ বালু উত্তোলনের সঙ্গে কমপক্ষে ৫০টি নেতাকর্মীর পরিবার জড়িত। জানি নদী হতে বালু উত্তোলন করা অবৈধ। তাইতো সবাই মিলে উপজেলার সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতাসীন নেতাসহ প্রশাসনকে মাসোহারা দিয়েই আমরা বালু উত্তোলন করে আসছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। যেসব এলাকায় বালু উত্তোলন চলছে, খোঁজখবর নিয়ে সেগুলো বন্ধ করার জন্য শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমরা বিদ্যমান আইন অনুযায়ী অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ এবং শৃঙ্খলা আনতে সরিষাবাড়ীতে একটি বালু মহাল স্থাপনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন