বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু এবারও হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নিজের ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ছিল ৫ হাজার টাকা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার নিজের ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৫ টাকা। ৫ বছরের ব্যবধানে তার আয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৭২৫ গুণ। ৫ বছর আগের পেশা ছিল ব্যবসা ও সাংবাদিকতা। এখন তিনি ইট, বালু, সিমেন্টসহ অনলাইন ব্যবসায়ী বলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
পাঁচ বছর আগে বাবলু হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, তার বার্ষিক আয় ৫ হাজার টাকা। সেসময় তার হাতে নগদ ৩০ হাজার এবং ব্যাংকে জমা ছিল ৩০ হাজার টাকা। ওই সময় তার নিজস্ব একটি পুরোনো মোটরসাইকেল ছিল যার দাম ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে তার দুটি গাড়ি রয়েছে। এরমধ্যে একটি নিশান এক্সট্রেইল জিপ এবং অন্যটি ল্যান্ড ক্রুজার। দুটির দাম এক কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
আয়ের উৎস হিসেবে ৫ বছর আগে তিনি কৃষি খাত থেকে বছরে ৩ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে বছরে ২ হাজার টাকা আয়ের কথা উল্লেখ করেন। এবার হলফনামায় কৃষি খাতে তার কোনো আয়ের উল্লেখ নেই। সেখানে বাড়ি ভাড়া থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার। ইট বালু সিমেন্ট ও অনলাইন ব্যবসা থেকে বছরে আয় ১১ লাখ ১৫ হাজার টাকা এবং সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত আয় ও আনুতোষিক ২৩ লাখ ২৪ হাজার ২২৫ টাকা বলে উল্লেখ করেছেন। পাঁচ বছর তার কাছে নগদ ৩০ হাজার টাকা ছিল। বর্তমানে তার কাছে ৫ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা আছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনকালে তার ব্যাংকে ৩০ হাজার টাকার কথা উল্লেখ করা হলেও এবার ব্যাংকে কোনো টাকা জমা থাকার কথা উল্লেখ নেই।
বিগত সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় রেজাউল করিম বাবলু তার নিজ নামে কোন বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট নেই উল্লেখ করেন। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন তার নামে ১৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। সব মিলে বর্তমানে তার সম্পদের আর্থিক মূল্য ১ কোটি ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৫ টাকা।
শুধু যে আয় বেড়েছে বাবলুর, তা নয়। বিগত সংসদ নির্বাচনে তার গৃহিণী স্ত্রী বিউটি বেগমের নিজের নামে কোনো নগদ টাকা বা দালানের উল্লেখ না থাকলেও এবার তার নামে রয়েছে প্রচুর সম্পদ। তার নামে রয়েছে ১ হাজার বর্গফুটের একটি দালান, যার দাম ১ কোটি ১ লাখ টাকা ৫০ হাজার টাকা। ৫ বছর আগে স্ত্রীর নামে স্বর্ণের কোনো তথ্য হলফনামায় উল্লেখ না থাকলেও এবার তার স্ত্রী বৈবাহিক সূত্রে ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। ওই সময় বাবলুর নিজের কাছে ৬ ভরি স্বর্ণ ছিল উল্লেখ থাকলেও এবার তা উল্লেখ করা হয়নি। বর্তমানে বিউটি বেগমের কাছে নগদ ২ লাখ ৫০ টাকা রয়েছে, সেইসাথে আছে ৩ লাখ টাকা দামের একটি মোটরসাইকেল।
বিগত ৫ বছরে তার বাড়ির ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী ও আসবাবপত্রের কোনো হেরফের হয়নি। ওই সময় তার কাছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী ও দেড় লাখ টাকার আসবাবপত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এবারও একই পরিমাণ ইলেকট্রনিক্সসামগ্রী ও আসবাবপত্রের কথা উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।
পাঁচ বছর আগে স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে রেজাউল করিম বাবলুর কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৪৫ শতক। অকৃষি জমির আর্থিক মূল্য উল্লেখ করেছিলেন ৪৫ লাখ টাকা। এবার তিনি কৃষি জমির কথা উল্লেখ করেননি। তবে ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
যোগাযোগ করা হলে রেজাউল করিম বাবলু নিজের ও স্ত্রীর নামে সম্পদের বিষয়ে জানান, আয়কর বিভাগে দাখিল করা তথ্য বিবরণী অনুযায়ী হলফনামায় তথ্য দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন- ‘অনেক বছর ধরে ইট, বালু ও সিমেন্ট সরবরাহের ব্যবসা করি। এটাই আমার মূল ব্যবসা। বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবনে ইট-বালু ও সিমেন্ট সরবরাহ করে থাকি। তবে কাউকে জোর জবরদস্তি করে সেসব নিতে বাধ্য করি না। এ ছাড়াও গিগা ফুড ও জিটিটিভি নিউজ২৪.কম নামের দুইটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব থেকে যে আয় সেটাই আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ রয়েছে।’ স্ত্রীর আয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত ৫ বছর এমপি হিসেবে আমার সম্মানীর যে টাকা, সেসব স্ত্রীকে দিয়েছি। তিনি সেই টাকা জমা করে সম্পদশালী হয়েছেন।’
উল্লেখ্য, ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নিতে না পারায় গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ওই সময় তিনি গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। মিল্টন উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিলেও তা গৃহীত না হওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। এই অবস্থায় ভোটের এক দিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলুকে সমর্থন দেয় স্থানীয় বিএনপি। ফলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে ট্রাক প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রেজাউল করিম বাবলু।
মন্তব্য করুন