মৌলভীবাজারে গ্রামগুলোর রাস্তার দুপাশে সারি সারি আগরগাছ চোখে পড়বে। এ গাছ এক সময়ের নিম্নবৃত্তের গ্রামবাসীর সংসারে সচ্ছলতা এনে দিয়েছে। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে গড়ে উঠেছে আগর আতর তৈরির কারখানা। গ্রামের পথ ধরে হাঁটলেই নাকে আসবে আগর-আতরের সুঘ্রাণ। জেলার বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নে ২৫০-৩০০ ছোট ও মাঝারি আগর আতর কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানার মালিকরা বর্তমানে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। চলমান হরতাল-অবরোধের কারণে উৎপাদিত পণ্য ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সে সঙ্গে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগর আতরে আগের মতো লাভ হয় না তাদের। এ ছাড়া বর্তমানে হরতাল-অবরোধের কারণে মালামাল পরিবহনের কারণে যান পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। বেড়ে গেছে পরিবহন খরচও। কিন্তু সে অনুযায়ী আতরের দাম বাড়েনি। ১০ বছর আগে যে দাম ছিল সে রকমই আছে। মুনাফা কম পাওয়ায় অনেকে কারখানা বন্ধ করে ভিন্ন ব্যবসার চিন্তাভাবনা করছেন।
আগর আতর তৈরি করাও সহজ কাজ নয়। এ জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন। শ্রমিক খরচও বেড়েছে। কীভাবে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় সে বিষয়ে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, টুকরো করে পরে বালতি হিসেবে বিক্রি করেন তারা। ১০০ টাকা করে ১ বালতি বিক্রি হয়। সারা দিনে শ্রমিকরা ২-৩ বালতি কাটতে পারেন। সকাল ৯ টা থেকে ৪টা পর্যন্ত আগরের কাজ করতে হয়। যে পরিমাণ কাটতে পারি সে হিসেবে টাকা। কোনো দিন বেশি কোনো দিন কম। সাধারণত দিনে ৩৫০ টাকা করে পান তারা। আগর আতরের চা বাগানের মালিক মো. তোফাজ্জল হক বলেন, প্রথমতো আমরা গাছটা ফ্যাক্টোরিতে নিয়ে আসি। তারপর আমাদের শ্রমিকদের দিয়ে গাছের সাদা অংশ ও কালো অংশটা আলাদা করে ফেলি। দুবাই, কাতার, কুয়েত, সৌদি, বাহরাইন, ভারত এসব অঞ্চলে এগুলো যায়।
আগর আতরের ব্যবসায়ী মো. মিছবাহ উদ্দিন বলেন, আমার পেছনের ঘরটা আগর আতরের কারখানা। বর্তমানে গ্যাসের বিল যে পরিমাণে বাড়ছে, আমরা গ্যাসের বিল দিয়ে মুনাফা করতে গিয়ে বড় কষ্ট হয়। অনেক লস হয়। এ কারণে এই আমার কারখানাটাও বন্ধ করে রাখছি।
তিনি আরও বলেন, গ্যাসের বিল অতিরিক্ত হয়ে গেছে, পণ্যের দাম কম। গ্যাসের দাম বেশি। আতর বেশি দামে বিক্রি করতে পরছি না। কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ১৫-২০ বছর ধরে আগরের ব্যবসা করে আসছি। বর্তমানে আগর ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
আগর আতর ম্যানুফেকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনসারুল হক বলেন, মৌলভীবাজার থেকে ঢাকায় মাল পাঠাতে হয়। বর্তমানে হরতাল-অবরোধের কারণে আমাদের এক্সপোর্ট মালগুলো পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। অনেক ঝুঁকি নিয়ে এই পণ্যগুলো পাঠাতে হচ্ছে। গ্যাসের দাম আগে ছিল ১০ টাকা আর এখন ৩০ টাকা। এ জন্য অনেক কারখানা বন্ধ থাকে। উৎপাদন কম হচ্ছে, আর গ্যাস নতুন সংযোগও দিচ্ছে না। যার কারণে কারখানাও বাড়ছে না, কারখানা না বাড়ার কারণে ব্যবসা বাড়ছে না।
মন্তব্য করুন