লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী -কালীগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় এক শতাংশ কৃষি জমির মূল্য ৩৮ টাকা ১৮ পয়সা দেখিয়েছেন। এছাড়াও মৎস্য খামারের শতাংশ প্রতি দাম দেখানো হয়েছে ৬০ টাকা ৬০ পয়সা। হলফনামা বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
হলফনামায় দেওয়া তথ্যমতে, পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত কৃষি জমির পরিমাণ ২৫ বিঘা, যার আর্থিক মূল্য তিনি দেখিয়েছেন ৩১ হাজার ৫শ টাকা। সেই অনুপাতে তার কৃষি জমির পরিমাণ ৮২৫ শতাংশ। যার প্রতি শতাংশের মূল্য দাঁড়ায় ৩৮ টাকা ১৮ পয়সা।
এছাড়াও পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত মৎস্য খামার ৩৫ বিঘা। যার মূল্য দেখিয়েছেন ৭০ হাজার টাকা। হিসাব মতে তার মৎস্যখামারের ১১৫৫ শতাংশ জমির প্রতি শতাংশের মূল্য ৬০ টাকা ৬০ পয়সা হয়।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছরে তার আয় বেড়েছে ৫ গুণ। আর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৯ গুণ।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে জমা দেওয়া তার হলফনামায় দেখিয়েছিলেন, অস্থাবর সম্পদ সাড়ে ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিকসামগ্রী ও আসবাবপত্র। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য হন।
টানা দুইবার সংসদ সদস্য থাকার পর এবারও একই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। এবার জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা গেছে, তার এক দশকের ব্যবধানে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৮৬ হাজার ৫০০ থেকে বেড়ে ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকারও বেশি হয়েছে। তবে ঘরে আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকসামগ্রী ১০ বছর আগে যা ছিল তাই দেখিয়েছেন তিনি।
তবে অস্থাবর সম্পত্তি বাড়লেও সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ২০১৩ সালে তিনি স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছিলেন- ২৫ বিঘা কৃষিজমি, ২০ শতক অকৃষিজমি, ৩৭ লাখ টাকার দালান ও ৩৫ বিঘা জমির মাছের খামার। এবাবের হলফনামায় তিনি কৃষি ও অকৃষিজমি এবং মাছের খামার আগের মতোই দেখিয়েছেন। তবে ৩৭ লাখ টাকা মূল্যের ওই দালান না দেখিয়ে ঢাকায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের একটি প্লট দেখিয়েছেন।
হলফমানায় পৈত্রিক সূত্রে তিনি ২৫ বিঘা কৃষি জমির মালিক। যার মূল্য ৩১ হাজার ৫শত টাকা, ২০ শতক অকৃষি জমির মালিক, যার মূল্য ৭ লাখ টাকা এবং ৩৫ বিঘা চা বাগান, রাবার বাগান ও মৎস্য খামারের মালিক, যার মূল্য ৭০ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। কিন্তু ২৫ বিঘা কৃষি জমির বর্তমান বাজার মূল্য বিঘা প্রতি ১০ লাখ টাকা দরে আড়াই কোটি টাকা। এছাড়া চা বাগান, রাবার বাগান ও মৎস্য খামার করা ৩৫ বিঘা জমির বাজার মূল্য বিঘা প্রতি ১০ লাখ টাকা দরে সাড়ে তিন কোটি টাকা।
হলফনামায় দেওয়া তথ্যে, নুরুজ্জামানের বর্তমানে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য প্রায় ৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। যা এক দশক আগে ছিল মাত্র ৪৬ লাখ টাকা। ব্যবধান অনুযায়ী ১০ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ৯ গুণ। আর বার্ষিক আয় বেড়েছে ৫ গুণ। ২০১৩ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ টাকা। কৃষি, ঘরভাড়া, ব্যবসা, সম্মানী ও মৎস্য খামার থেকে তার এসব আয় আসত। ২০২৩ সালের হলফনামার তথ্যে, তার আয়ের খাত কৃষি, ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত ও মন্ত্রী হিসেবে সম্মানী অর্থ দেখিয়েছেন। এসব খাত থেকে তার বার্ষিক আয় ৩২ লাখ টাকার বেশি। সে অনুপাতে তার বার্ষিক আয় বেড়ে হয়েছে ৫ গুণেরও বেশি।
বর্তমানে ব্যাংকের আমানত থেকে তার বার্ষিক আয় ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৯০৬ টাকা উল্লেখ থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার হলফনামায় ওই আয় উল্লেখ ছিল না। এ ছাড়াও হলফনামার তথ্যে, প্রথমবার ২০১৩ সালে তার স্ত্রীর কোনো আয় ছিল না। তখন তার স্ত্রীর ৩২ হাজার টাকার অলংকার দেখিয়েছিলেন কিন্তু এবার তা দেখাননি।
মন্তব্য করুন