শরীয়তপুরের জাজিরায় ভাপা পিঠা তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন আবুল হোসেন (৫০)। নতুন ধানের গুঁড়া, খেজুরের গুড় ও নারিকেল দিয়ে তৈরি সুস্বাদু ভাপা পিঠা বিক্রি করে তার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। নিজের আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি সংসারের খরচ জোগান ও ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করাচ্ছেন তিনি। আবুল হোসেনের বানানো ভাপা পিঠার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাজুড়ে। স্থানীয় তার দোকান চেনেন ‘আবু পিঠা’ নামে। এখন তার মাসে আয় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জাজিরার কাজিরহাট বাস স্ট্যান্ড মহাসড়কের পাশেই আবুল হোসেন ভাপা পিঠার দোকান নিয়ে বসেছেন। আগাম ধানের ভাপা পিঠা খেতে দোকানের চারদিকে ঘিরে আছে ক্রেতারা। নতুন ধানের পিঠার সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যাও। নতুন ধান থেকে তৈরি করা চালের গুঁড়া, খেজুরের গুড় ও নারিকেল দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভাপা পিঠা। প্রতিটি স্পেশাল ভাপা ২০ টাকা, নরমাল ভাপা পিঠা ১০ টাকা। এসব দাঁড়িয়ে খাওয়ার পাশাপাশি অনেকেই নিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের পরিবারের জন্য।
ভাপা পিঠা বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে এখানে ভাপা পিঠা বিক্রি করি। মানুষ আমার পিঠা পছন্দ করে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করছি। শীতের তীব্রতা বাড়লে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হবে। সেই অপেক্ষায় রয়েছি। শীত এলে আমি এই ৪ মাস বাজারে ভাপা পিঠা বিক্রি করি। অন্য সময় আমি ভ্যানচালক।
তিনি আরও বলেন, শীত এলে কষ্ট করে আর ভ্যান চালাই না। শীতের মধ্যে ভাপা পিঠার প্রচুর চাহিদা এখানে। তাই শীতের ৪ মাস প্রতিদিন পিঠা বিক্রি করি। এই চার মাস আমার বেচাকেনা অনেক ভালো থাকে। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছি, বাড়িতে নতুন ঘর দিয়েছি। এখন ছেলেকে ইতালি পাঠাব।
কাজিরহাট ব্রাক অফিস এলাকার বাসিন্দা ওয়াসিম বলেন, আমি প্রতিদিন এখানে পিঠা খেতে আসি। অন্য সব জায়গার তুলনায় এখানের পিঠার মান ভালো। না খেলে আসলে বুঝবেন না। তাই বন্ধুদের নিয়ে এখানেই চলে আসি পিঠা খেতে।
মনাই সৈয়াল কান্দির খবির বেপারি বলেন, এখানের পিঠা খুবই মজা। আমার স্ত্রী বলেছে পিঠা নিয়ে যেতে। তাই চলে আসছি আবুল ভাইয়ের ভাপা পিঠার দোকানে। স্থানীয়রা সবাই ‘আবু পিঠা’ নামেই তাকে চিনে।
মোহাম্মদ আলী মিয়া নামের আরেকজন বলেন, গ্রামে শীত নেমেছে। শীত আসার পর থেকে পিঠা বিক্রি শুরু হয়েছে। আমার পছন্দের ভাপা পিঠা। এক সময় মায়ের হাতে বানানো পিঠা খেয়েছি। এখন এখানে খাই।
আকবর আলী খান বলেন, প্রতিদিন কাজ শেষে বাসায় ফেরার সময় চোখে পড়ে এ শীতের পিঠা। শীতে পিঠার লোভ কে সামলাতে পারে? তাই প্রতিদিন পিঠা খেতে এখানে আসি।
পিঠা খেতে আসা শাহ আলম নামের এক পথচারী বলেন, নতুন ধানের ভাপা পিঠা খেয়ে অনেক ভালো লাগছে। ধানের পিঠার আগাম স্বাদ পেলাম।
কাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী সুজন কাজী বলেন, আমি প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর এ দোকান থেকে পিঠা খাই। আগে যদিও বাড়িতে পিঠা বানানোর হিড়িক পড়তো কিন্তু এখন সে উৎসবের আমেজ আর দেখা যায় না।
মন্তব্য করুন