রাজশাহীর বাগমারায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদের পক্ষে প্রচারে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে নৌকার প্রার্থীর তিনজন সমর্থকসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৬ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেউখালী এলাকা এই মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী শায়লা খন্দকার দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেউখালী এলাকায় প্রচার চালাতে যান। ওই সময়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (কাঁচি প্রতীক) ও বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হকের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ওই এলাকার বাসিন্দা আতাউর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক কাঁচি প্রতীকের পোস্টার লাগাচ্ছিলেন। ওই পথ দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর স্ত্রীসহ সমর্থকেরা যাওয়ার চেষ্টা করলে এনামুলের পিস আতাউরের নেতৃত্বে রাস্তায় ভ্যান রেখে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি হয়। এ সময় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী আতাউরসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা উত্তেজিত হয়ে নৌকার সমর্থকদের উপর চড়াও হয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। মারামারিতে উভয়পক্ষের ছয়জন আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে আতাউরের হাতে আঘাত লেগেছে, তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে প্রচারে বাধা এবং নৌকার সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে চেউখালীতে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়, তাদের প্রচারে বাধা দেওয়া হয়েছে। পোস্টার টাঙানোতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার নিন্দা জানান।
গোয়ালকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার বলেন, নৌকার প্রচারে বাধা দেওয়া হয়েছে। সংসদ সদস্যে ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুলের পিএস আতাউরের নেতৃত্বে তাদের লোকজনের ওপর হামলা ও প্রচার বাধা দেওয়া হয়েছে। এটি তো মগের মুল্লুক না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের প্রচার চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু শুরু থেকেই নির্বাচনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এনামুল নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক ওই এলাকার বাসিন্দা ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহাদত হোসেন শুভ জানান, তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচি প্রতীকের পোস্টার লাগানোতে বাধা দেওয়া হয়। পোস্টার টানানোর কারণে গোয়ালকান্দির ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর সরকারের নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এনামুল এখন জনবিচ্ছিন্ন। তার নিজের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আর করবেই না কেন। তারা আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে সেজন্য নৌকার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। যদি এমপি এনামুল আওয়ামী লীগ করত এবং নৌকাকে ভালোবাসত তাহলে এভাবে নৌকার বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে যেত না। কিন্তু মাঠে যখন দেখছে যে, তিনি জনবিচ্ছিন্ন এজন্য নৌকার প্রচারে বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। কিন্তু জনগণ তার হীন প্রচেষ্টা রুখে দেবে।
বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন ওই এলাকায় প্রচার চালাতে গেলে ভ্যান দিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হয়। এ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। তবে বড় কিছু হয়নি।
উল্লেখ্য, রাজশাহী-৪ (বাগমরা) আসনে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদ, জাপার আবু তালেব প্রামাণিক, বিএনএম এর সাইফুল ইসলাম রায়হান, এনপিপির জিন্নাতুল ইসলাম, স্বতন্ত্র এনামুল হক ও বাবুল হোসেন। এদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হক দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি কাঁচি প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
মন্তব্য করুন