চলছে ভরা মৌসুম। এই শীতে গত বছরের তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহও অনেক বেশি। সে হিসেবে সকল ধরনের সবজির দাম কম থাকার কথা, কিন্তু বাস্তবে চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। গত কয়েক বছরেও শীতকালীন সময়ে এই ভরা মৌসুমে সবজির দাম এত বেশি কখনো দেখা যায়নি। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সকল ধরনের সবজির দাম বেড়েছে দুই তিন গুন। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নববর্ষকে সামনে রেখে এক লাফে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও মাছের দাম।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) সোনাইমুড়ী, কালিকাপুর, আমিশাপাড়া, বাজারে সরজমিনে গিয়ে ক্রেতা এবং বিক্রিতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় নতুন আলু ৮০ থেকে ১০০, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ফুলকপি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা এবং গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায়, ধুন্দুল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, শশা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা কেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, জালি কুমড়া ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। পুরাতন আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, নতুন আলু ১০০ টাকা, নতুন উঠা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে, ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাল শাক ৩০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৫০ টাকা, মূলা শাক ৩৫ টাকা, পালং শাক ৪০ টাকা, কলমি শাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। শুধু পেঁপে আর মুলা ছাড়া ৫০ টাকার কেজির নিচে অন্য কোনো সবজি নেই।
এই অবস্থায় সবজির বাজারে অস্বস্তি বিরাজ করছে ক্রেতাদের মাঝে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির কোনো সরবরাহ সংকট চোখে পড়েনি। বরং শীতকালীন সবজির ভরপুর সরবরাহ এখন। প্রতি বছর শীতকালীন এ সময়ে বাজারে সবজির সরবরাহ সবচেয়ে বেশি থাকে। সবজির পদেও থাকে নানা বৈচিত্র্য। এরপরও সবজির দাম হু হু করে প্রতিদিন বেড়েই চলছে।
সবজি বিক্রেতাদের দাবি, উত্তরাঞ্চলসহ দেশের কিছু এলাকায় বৃষ্টিতে উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ কমেছে। তাছাড়া উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায়, বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে চাষিদের। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মোকামে গুলোতে সবজির দাম বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আজ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। যা গত সপ্তাহে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সোনালি ৩৩০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি, লেয়ার ৩১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে একাধিক মুরগি ও মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাস খানেক ধরে মুরগি ও মাংসের বাজার চড়া রয়েছে। প্রতিদিনই মুরগির দাম বাড়ছে। তারসঙ্গে তাল মিলিয়ে মাংসের দাম ওঠানামা করছে। হরতাল-অবরোধে ক্ষেত্রবিশেষে বেড়েছে পরিবহন খরচ তাই পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায়, খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
ক্রেতা ইসমাইল হোসেন টিটু বলেন, আমি অল্প বেতনের চাকরি করি, তরকারি কেনার মতো অবস্থা আমার নেই। মাছ মাংস কেনা দূরের কথা, সকল জিনিসের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে, বলার কেউ নেই, দেখারও কেউ নেই।
মন্তব্য করুন