লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূকে (২৫) ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তিন ইউপি সদস্যসহ মাতবররা সালিশি বৈঠকে অভিযুক্তকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে ‘এ বিচার মানি না’ বলে চিৎকার করে গৃহবধূর পরিবার ও স্বজনরা সালিশ বৈঠক থেকে উঠে চলে যান।
সোমবার (৩ জুলাই) সন্ধ্যায় রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী ইউপির সমিতির হাট এলাকায় শাহজাহান মেম্বারের দোকানে এ সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি ভুক্তভোগী গৃহবধূর পরিবার।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২৭ জুন) গভীর রাতে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই গৃহবধূর স্বামী ঢাকায় কাজ করেন। দুই সন্তান নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে থাকেন। গত মঙ্গলবার রাতে একই গ্রামের আজিদ আলি হওলাদারের ছেলে আলমগীর হাওলাদার (৩০) ওই গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় গৃহবধূ চিৎকার দিয়ে ধরতে গেলে অভিযুক্ত পালিয়ে যায়।
সোমবার সন্ধ্যায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেন মোল্লা, দাদন মেম্বার (সাবেক), ইউপি সদস্য মো. শাজাহান মোল্লা ও ইউপি সদস্য আবুল হোসেনের উপস্থিতিতে কয়েকজন মাতবর বিষয়টি নিয়ে গ্রামে সালিশ বৈঠক বসায়। বিচারে সোমবার রাতেই গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় বসবাস করার নির্দেশ দেওয়া হয় অভিযুক্ত আলমগীরকে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্যদের বিচারের এই সিদ্ধান্ত না মেনে ওই গৃহবধূ, তার দিনমজুর বাবা ও ভাই সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। তারা পুলিশের কাছে বিচার চাইবেন বলেও জানা।
দক্ষিণ চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরায়েজি বলেন, এ ঘটনা তো জানি না।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি মনির হোসেন মোল্লা বলেন, অভিযুক্ত আলমগীর এলাকার চিহ্নিত চোর। সে মানুষের অনেক ক্ষতি করে। এ ঘটনায় মেয়েপক্ষ চেয়েছিল আলমগীরকে মারধর ও জরিমানা করতে। কিন্তু সালিশদাররা না রাজি হওয়ায় সালিশ হয়নি। আমিও আমার অফিসে চলে আসি।
তবে ইউপি সদস্য শাহজাহান ও আবুল হোসেন বলেন, আলমগীর চুরি করতে ঘরে ডুকেছে, কিন্তু ধর্ষণ করতে না। আপনাদের দেখে গৃহবধূ ও তার বাবা বলেছেন, ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন। এলাকার স্বার্থে আলমগীরকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলেছি।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত আলমগীর বলেন, আমি এ কাজ করিনি। আমাকে মিথ্যা অভিযুক্ত করা হচ্ছে। সালিশদারদের চাপে পড়ে মারধরের ভয়ে আমি দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হই। আমার স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। আমি দিনমজুরের কাজ করি।
রায়পুর থানার ওসি শিপন বড়ুয়া বলেন, এ ঘটনা আমাদের জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন