বোরো রোপণের প্রস্তুতি নিতে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জমি প্রস্তুত ও বোরো ধানের চারা তুলতে ব্যস্ত এখন কৃষক। উপজেলার শশীদল, চান্দলা ও দুলালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলি মাঠ ঘুরে এ দৃশ্য দেখতে পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যে উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে ব্যস্ততা বেড়েছে। ঘন কুয়াশা আর হিমশীতল আবহাওয়া উপেক্ষা করে কৃষকরা বোরো জমি তৈরি করছেন। বোরো রোপণের জন্য জমি উপযুক্ত করতে সেচ কাজ, জমি চাষ, জমি সমান করতে জমিতে মই দেওয়া ও বোরো ধানের চারা তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কৃষকরা। ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ও কেউ কেউ গরু দিয়ে হালচাষ করছেন। খাল বা ডোবা পুকুর থেকে কোথাও কোথাও গভীর নলকূপ থেকে চলছে জল সেচ। কুয়াশা আর শীত উপেক্ষা করে চলছে বীজতলা থেকে ধানের চারা তোলার তোড়জোর শুরু করেছে কৃষকরা। কোনো কোনো কৃষক বোরো ধান রোপণ শুরু করে দিয়েছেন।
বোরো ধান আবাদের বিষয়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, ভালো ফলনের জন্য সুষম সারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সার প্রয়োগ করতে দুটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখা দরকার। প্রথমত, ধানের জাত, জীবনকাল ও ফলন মাত্রার ওপর ভিত্তি করে সারের মাত্রা ঠিক করা। দ্বিতীয়ত, সাড়ে কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য কোনো সার কখন ও কীভাবে প্রয়োগ করতে হবে তা নির্ধারণ করা। স্যার ব্যবহার করে অধিক উৎপাদন ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াই প্রতিটি কৃষকের স্বপ্ন। জমির মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে স্যারের মাত্রা নির্ণয় করা সর্বোত্তম। এ ছাড়া কিছু যন্ত্রণা অধিদপ্তরের সহায়তায় সার সুপারিশ গাইড অনুযায়ী কিংবা অনলাইন শার্ট সুপারির নির্দেশিকা সফটওয়্যার (এফআরএস) ব্যবহার করেও স্যারের মাত্রা জানা যায়। এ বছর এই উপজেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর। বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রান্তিক কৃষকদের পাশে আছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছেন, এ বছর বোরো মৌসুমে আবহাওয়া বোরো চাষের উপযোগী থাকলে বোরোর ফলনে লাভবান হবেন কৃষকরা।
উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের উত্তর নাগাইশ এলাকার কৃষক আলী মিয়া কালবেলাকে জানান, এ বছর বোরো মৌসুমে তিনি ৪৩ শতক জমিতে বোরো আবাদ করবেন। এ জন্য তিনি বীজতলা থেকে ধানের চারা তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্যদিকে জমি প্রস্তুত করতে হালচাষ ও জমিতে জলসেচ করায় দিন পার করছেন। এ বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কিছুটা দেরি হলেও এখন পুরোদমে চলছে কাজ। গেল বছর বোরোধান আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়ায় এ বছরও তিনি বোরো আবাদে উৎসাহী হয়েছেন।
একই এলাকার আরেক কৃষক জাবির উদ্দিন কালবেলাকে জানান, বেশিভাগ জমি তিনি বোরো আবাদের লক্ষ্যে প্রস্তুত করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে প্রস্তুতকৃত জমিতে রোপণ করা হবে। তার অধিকাংশ জমি খালের পাশে হওয়ায় জমি তৈরিতে সেচ সুবিধা পেয়েছেন তিনি। এ বোরো মৌসুমে তিনি ৬৪ শতক জমিতে বোরো আবাদ করবেন।
উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের বেজুরা এলাকার কৃষক খাদেমুল কালবেলাকে বলেন, গত বছর আমি ৫৮ শতক জমিতে বোরো আবাদ করেছিলাম। ফলনও ভালো পেয়েছিলাম। এ বছরও ৬৩ শতক জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যে জমি প্রস্তুতের কাজ করছি। আশা করছি প্রাকৃতিক কোনো সমস্যা না হলে এ বছরও ভালো ফলন পাব।
উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের গোলাবাড়িয়া এলাকার কৃষক বিল্লাল হোসেন কালবেলাকে জানান, এ বছর তিনি স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে খালের পাশের কিছু জমিতে আগাম বোরো ধান রোপণ করেছেন। পাশের খাল থেকে সেচ কাজ পরিচালনা করছেন। এ ছাড়াও এ বছর তিনি আরও ৯০ শতক জমিতে বোরো আবাদ করবেন। কিছু কিছু জমি প্রস্তুত করছেন। বীজতলায়ও এ বছর ঘাটতি না থাকায় ধানের চারার সংকট হবে না তার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, এই মৌসুমে এই উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫৮০ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। বোরো ধান চাষে উপজেলার কৃষকদের আগ্রহী করার জন্য ইতিমধ্যে আমরা ২৬০০ কৃষককে হাইব্রিড ধানের বীজ এবং ২৫০০ কৃষককে উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ ও সার প্রণোদনা হিসেবে সহায়তা করেছি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রতিনিয়ত মাঠে কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই বোরো ধান রোপণ শুরু হবে এবং আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো বলে আশা করছি।
মন্তব্য করুন