ফেনীতে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহে হাঁড় কাঁপানো শীত পড়ছে। প্রচণ্ড শীতে গরম কাপড়ের অভাবে ভোগান্তি পোহাচ্ছে ছিন্নমূল মানুষজন। কাজে যেতে পারছেন না খেটে খাওয়া মানুষ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শনিবার (১৩ জানুয়ারি) জেলায় সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে সাথে বাতাসের আদ্রতা ৯৭ শতাংশ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও দুপুরের পর সূর্যের আলো কিছুটা দেখা মেলে। চলমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আরও দুই-তিনদিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে শীত ও ঠান্ডাজনিত কারণে রোগীর ভিড় বেড়েছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালে। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে জ্বর, সর্দি-কাশি সাথে বেড়েছে নিউমোনিয়া রোগ। এতে অভিভাবক ও স্বজনরা আছে নানাবিধ কষ্টে। এতে শিশু ও বয়োজৈষ্ঠ্যরা বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে গাড়ি। এতে গাড়ির গতি কমে গন্তব্য যেতে সময় লাগছে বেশি। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন গাড়ির চালকরা।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আসিফ ইকবাল জানান, শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ইতোমধ্যে ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।
ফেনী রেলওয়ে স্টেশনে শনিবার রাতে ঘুরে দেখা যায়, ভাসমান মানুষজন রেলের প্লাটফর্মের বিভিন্ন স্থানে শীতে কাঁথা ও হালকা কাপড় মুড়ি দিয়ে শুয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
রেলের প্লাটফর্মে শুয়ে থাকা আবদুল ওয়াদুদ নামে এক অসহায় বৃদ্ধা জানান, তার বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যখন যে কাজ পান সেই কাজ করেন। শরীরটা ভালো না আজ কয়দিন। প্রচন্ড শীতে রীতিমতো কাজেও যেতে পারছেন না।
মো. দেলোয়ার নামে অপরজন জানান, দুপুর ১২টা বাজলেও গায়ে গরম কাপড় জড়িয়ে আছেন তিনি। ঠান্ডার কারণে আজ ছাদ ঢালাইয়ের কাজে যেতে পারেননি এই দিনমজুর।
মরিয়ম বেগম নামে একজন গৃহিণী জানান, তাদের গৃহপালিত পশু গরু-বাছুর ও ছাগলগুলো মৃদুশৈত্য প্রবাহের কারণে বাড়ির বাইরে মাঠে নিতে পারছেন না। গবাদি পশুর গায়ে চটের বস্তা দিয়ে গা গরম রাখার ব্যবস্থা করছেন।
অপরদিকে শনিবার রাত ১০টার দিকে ‘আমরা করবো জয়’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের পাশে চাদর ও কম্বল নিয়ে পাশে দাঁড়ান। এসময় রেলের প্লাটফর্মে ঘুমন্ত ছিন্নমূল মানুষের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেন সংগঠনের সদস্যরা।
ওই সংগঠনের সমন্বয়ক তারেক আফতাব বলেন, আমাদের সংগঠনের মূল্য লক্ষ্য হলো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাই আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে সমাজের অবহেলিত মানুষদের সহায়তায় করে যাচ্ছি। ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের কাজ আমরা অব্যাহত রাখবো।
ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, গত তিন দিন ধরে ফেনীতে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। শনিবার ফেনীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের আদ্রতা ৯৭ শতাংশ। শৈত্যপ্রবাহ আরও ৩-৪ দিন থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন