কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৩, ০৩:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অঙ্গসংগঠনকে সক্রিয় করছে বিএনপি

এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক সক্ষমতা যাচাই করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। যাতে সাংগঠনিক কোনো দুর্বলতা থাকলে তা কাটিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে সংগঠনগুলো রাজপথে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ইতোমধ্যে বিএনপিতে আশা জাগাচ্ছে তারুণ্যের সমাবেশ
চলতি মাসেই সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে বিএনপি। ছবি : সংগৃহীত
চলতি মাসেই সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে বিএনপি। ছবি : সংগৃহীত

চলতি মাসেই সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে বিএনপি। তবে দলটির টার্গেট সেপ্টেম্বর। তখন থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর পরিকল্পনা করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। সেই আন্দোলন সফলে মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকেও কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এখন অঙ্গসংগঠনগুলোকে মাঠে নামানো হয়েছে। এর অংশ হিসেবে তিনটি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে ছয়টি বড় শহরে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য পাঁচটি সংগঠনের উদ্যোগে ছয় জেলায় ‘মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক সক্ষমতা যাচাই করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। যাতে সাংগঠনিক কোনো দুর্বলতা থাকলে তা কাটিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে সংগঠনগুলো রাজপথে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ইতোমধ্যে বিএনপিতে আশা জাগাচ্ছে তারুণ্যের সমাবেশ।

বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে আন্দোলন-সংগ্রামে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। সরকারবিরোধী আন্দোলনে অতীতে এই তিনটি সংগঠনই রাজপথে সাংগঠনিকভাবে জোরালো ভূমিকা পালন করেছে। তাই আগামীতে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনেও দলের প্রধান তিন এই অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন অর্থাৎ তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। তাই সারা দেশে আয়োজন করা হচ্ছে অঞ্চলভিত্তিক ‘তারুণ্যের সমাবেশ’। ১৪ জুন চট্টগ্রাম দিয়ে বিএনপির এ ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯ জুন বগুড়া এবং ২৪ জুন বরিশালে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। আগামী ৯ জুলাই সিলেট, ১৭ জুলাই খুলনা এবং ২২ জুলাই ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ কর্মসূচি। চূড়ান্ত আন্দোলন সামনে রেখে এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত করছে আন্দোলনরত বিএনপি।

তারুণ্যের এই সমাবেশ নিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এরই মধ্যে যেসব সমাবেশ হয়েছে, তাতে দেশের তরুণ-যুবকদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলেছে। বাকি সমাবেশগুলোতেও তরুণ জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশ সম্পৃক্ত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাবে বলে আশা তাদের। সরকার পতনের আন্দোলনে তরুণদের মাঠে নামিয়ে রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে চান তারা।

তারুণ্যের এই সমাবেশ সফলে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান এবং ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল সারা দেশ ছুটে বেড়াচ্ছেন। তারুণ্যের সমাবেশ সফলে গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট যান যুবদল সভাপতি। জেলা বিএনপি আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, তারুণ্যের সমাবেশ তরুণদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আজ মানুষের ভোটাধিকার নেই। প্রায় ৪ কোটি নতুন ভোটার হয়েছে। তারা কেউ ভোট দিতে পারেননি। মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নেমেছি। দাবি আদায় না করা পর্যন্ত মাঠে থাকব।

এদিকে তারুণ্যের সমাবেশের মধ্যেই দেশের ছয় বড় শহরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘দেশ বাঁচাতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’। বিএনপির পাঁচ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল ও জাসাসের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হবে। প্রথমে চারটি সংগঠনের উদ্যোগে এই কর্মসূচি হওয়ার কথা থাকলেও পরে জাসাসকে যুক্ত করা হয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের দুর্দিন, দুর্নীতি-শোষণ-নির্যাতনের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি হবে। ‘শ্রমজীবী মানুষের জাগরণের’ লক্ষ্যে আগামী ১৪ জুলাই নোয়াখালীতে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। এরপর দিনাজপুরে ১৯ জুলাই, রাজশাহীতে ২৮ জুলাই, যশোরে ৫ আগস্ট, হবিগঞ্জে ১২ আগস্ট এবং বরিশালে ১৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে এই পদযাত্রা। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষকে ব্যাপক হারে সম্পৃক্ত করতে চায় বিএনপি। উদ্দেশ্য, শ্রমজীবী মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে আন্দোলন সফল করা।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, তারুণ্যের মূল শক্তি গণতন্ত্রের পক্ষে, গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে। আজ যে গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়েছে, এটির বিরুদ্ধে যে তরুণরা জেগে উঠছে—তারুণ্যের এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে সেটিই প্রমাণিত হয়। অন্যদিকে তাঁতের সঙ্গে জড়িত তাঁতিরা আজ ধ্বংসের পথে। প্রকৃত মৎস্যজীবীরা তাদের ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নানা কালাকানুন ও সিন্ডিকেটের জন্য। আজকে কৃষক-শ্রমিকরাও বঞ্চিত। জুটমিলসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় লাখ লাখ শ্রমিক বেকার। সরকার যেমন গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছে, তেমনি মানুষকেও ঠেলে দিয়েছে অর্ধাহারে-অনাহারের দিকে। সুতরাং শ্রমজীবী মানুষের এই পদযাত্রা একদিকে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের যে ব্যাপক ও বহুমাত্রিক সংগ্রাম তার অংশ, অন্যদিকে শ্রমিকরা যে তাদের দাবি-দাওয়া, রুটি-রুজি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেটি প্রতিষ্ঠিত করারও সংগ্রাম।

জানা যায়, পদযাত্রার কর্মসূচি সফলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেনকে সমন্বয়ক করে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। প্রতিটি কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে পাঁচ সংগঠনের পক্ষ থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক দল এতে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কর্মসূটি সফলে ইতোমধ্যে ছয় বিভাগে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে টিম করে দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি সফলে অন্য চার সংগঠনও বিভাগীয় সমন্বয় কমিটি করছে। প্রতিটি কর্মসূচিকে ঘিরে সমন্বয় কমিটি করবে তাঁতী দল। নোয়াখালীর পদযাত্রা সফলে ইতোমধ্যে সমন্বয় কমিটি করেছে সংগঠনটি।

১৫ জুলাই নোয়াখালীতে পদযাত্রার কর্মসূচি থাকলেও তা এক দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। কর্মসূচিতে নোয়াখালী ছাড়াও লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লা উত্তর ও দক্ষিণ জেলা এবং মহানগরের পাঁচ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। কর্মসূচি সফলে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘শ্রমজীবী মানুষ আজ পরিবার-পরিজন নিয়ে দিশেহারা। জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে হলে সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করতে হবে। এই লক্ষ্যে আমরা ধীরে ধীরে একদফা আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’

পদযাত্রার কর্মসূচি সফলে অন্য অঙ্গসংগঠনের মতো তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদও সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, দেশ ও মানুষ বাঁচাতে এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মেহনতি মানুষের পদযাত্রা সফল করতে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করি, কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিয়ে এই সরকারের প্রতি তাদের অনাস্থা জানাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তাঁতী দলের আহ্বায়ক জানান, প্রথমে চারটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও পরে জাসাসকে সংযুক্ত করা হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও শ্রমিক নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, তিন সংগঠনের তারুণ্যের সমাবেশের পাশাপাশি পাঁচ সংগঠনের উদ্যোগে ‘দেশ বাঁচাতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’ শীর্ষক নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, যা রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। নোয়াখালীতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দেশব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের নবজাগরণ ঘটবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তিন যুবকের কোমরে মিলল আট কোটি টাকার স্বর্ণ

হাসপাতালে খালেদা জিয়া

ইসির রোডম্যাপে দেশ নির্বাচনের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল : সমমনা জোট

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ শাবির ৮৫ শিক্ষকের

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা চুয়েটের

আল আরাফা ব্যাংকের চাকরিচ্যুত ৩ কর্মকর্তা রিমান্ডে, কারাগারে ৮

দাবি আদায় হয়নি, নতুন ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

রমনা বিভাগের ডিসিকে নিয়ে অপপ্রচার

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণায় এবি পার্টির প্রতিক্রিয়া 

বাস্তবায়ন হয়নি ৩৫ বছর আগের খুবি ক্যাম্পাসের মহাপরিকল্পনা

১০

ঋতুপর্ণার বাবা কখনোই চাননি মেয়ে নায়িকা হোক

১১

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাবি উপাচার্যের সাক্ষাৎ

১২

ফোনের চার্জার যে কারণে সাদা বা কালো রঙের হয়

১৩

পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল

১৪

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম ফিলাপ ফি বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি

১৫

গুম করলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন

১৬

ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল, দুই ট্রাফিক পুলিশ ক্লোজড

১৭

গাজায় যুদ্ধবিরতি কেন হচ্ছে না, জানাল মিশর

১৮

ডাকসু নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার বক্তব্য

১৯

কপোতাক্ষ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, লাখ টাকা জরিমানা

২০
X