পুঁজি সংকটে উদ্যোক্তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় গত কয়েক বছরে চাঁদপুর জেলায় বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ৭০৮টি খামার।। পোলট্রি, গরুসহ বিভিন্ন খামার বন্ধ হওয়ায় চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে মালিকসহ খামারগুলোতে কাজ করা শ্রমিকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন কর্মপরিকল্পনা নিলে আলোর মুখ দেখতে পারে বন্ধ হওয়া খামারগুলো।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) চাঁদপুরের বিভিন্ন খামারিদের সাথে কথা বলে সংশ্লিষ্ট কার্যালয় থেকে খামার বন্ধের এ তথ্য পাওয়া যায়।
বাহের খলিশাডুলীতে মুরগির খামার দিয়ে বিপাকে পড়েছেন গনি মিয়া। তিনি বলেন, অস্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থা, খাদ্য ও ওষুধের দাম বৃদ্ধির কারণে খামার ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রতিনিয়ত লোকসান গোনার কারণে পুঁজি হারাচ্ছি আমি। দু'একজনকে কাজে নিলেও এখন লোকসান হওয়ায় তাদের আসতে নিষেধ করে দিয়েছি।
পুরানবাজারের গরুর খামারি হাসিবুল হাসান মুন্না বলেন, দুধ কিংবা গরু বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায়, তাতে খরচ বাদ দিয়ে লাভ খুব একটা থাকে না। এমন চিত্র জেলার শত শত পোলট্রি ও দুগ্ধ খামারির। উন্নত মানের মুরগির বাচ্চা সরবরাহ না করা এবং পোলট্রি ও গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়াসহ অনুকূল পরিবেশ না থাকায় প্রতি মাসে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
খামারিরা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে বন্ধ হওয়া খামার পুনরায় চালু করা সম্ভব। এতে উৎপাদনের পাশাপাশি সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।
জেলা প্রাণিসম্পদ সূত্রমতে, চাঁদপুর জেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে গরু, মুরগি, ছাগল, হাঁস, টার্কি, কবুতরসহ বিভিন্ন প্রজাতির মোট খামার রয়েছে ৯ হাজার ৫১৫টি। গত ৭ বছরে বন্ধ হয়ে গেছে ৭০৮টি খামার। এরমধ্যে ৫ হাজার ৮৮৪ গরুর খামারের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৩২৬টি। ২ হাজার ১২২টি পোলট্রি খামারের মধ্যে বন্ধ হয়েছে ২২২টি। এসব খামার বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন ২ সহস্রাধিক খামারি ও শ্রমিক।
আরও জানা যায়, চাঁদপুর জেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুধের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ দশমিক ১ লাখ মেট্রিক টন। মাংসের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১ দশমিক ১২ মেট্রিক টন এবং ডিমের চাহিদা রয়েছে ৩১ দশমিক ১০ কোটি পিস। তবে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, বৈদেশিক মন্দা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশে পোলট্র্রি ও গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। এতে করে বেশ কিছু পোলট্রি ও গরুর খামারি তাদের খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা নিবন্ধনের মাধ্যমে ব্যাংকে আবেদন করলে স্বল্প সুদের বিনিময়ে ঋণ সুবিধা পাবেন।
মন্তব্য করুন