চাঁদপুর শহরে কোনো রকমে সিঁড়ির নিচে অবস্থান নিয়ে গরম গরম চপ, পেঁয়াজু ও ছোলাবুট বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন দুলাল দাস। সৎপথে থেকে যেকোনো অবস্থায় থেকেও যে ভালোভাবে জীবনযাপন করা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন তিনি।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জেলা বিএনপি কার্যালয়সংলগ্ন অপর পাশে বিকেলে দুলালের বানানো চপ পেঁয়াজু খেতে ভিড় দেখা যায়।
জানা যায়, নারায়ণ দাস ও মৃত অঞ্জলী দাস দম্পতির দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে দুলাল সবার বড়। ষাটোর্ধ্ব দুলাল দাস চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়ার সাহা বাড়ির বাসিন্দা। সেখানে সামান্য পরিমাণে জমি কিনে স্ত্রী মিনতী রানী এবং রুদ্র দাস ও অর্পণ দাস নামে দুই ছেলে নিয়ে বসবাস করছেন। এর মধ্যে স্ত্রী গৃহিণী এবং বড় ছেলে রুদ্র দাস ঢাকা কলেজ থেকে মাস্টার্স দেবে ও ছোট ছেলে অর্পণ দাস গনি স্কুল থেকে এ বছরই এসএসসি দেবে। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি দুলাল দাস নিজেই।
সরজমিনে দেখা যায়, দুলাল দাস সিঁড়ির নিচে ওই চিলেকোঠায় চপ, পেঁয়াজু ও বুট রান্না করছেন। পরে মুখরোচক গরম গরম এসব খাবার বুট প্লেটপ্রতি ১০ টাকা, চপ ৫ টাকা, ডিম চপ ১০ টাকা, মুরগি চপ ৩০ টাকা, পেঁয়াজু ও বেগুনি ৫ টাকা দামে এবং ৬ টাকা দামে প্রতি পিস আলু পুরি বিক্রি করছেন। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে তার দোকান।
পুনাক চাঁদপুরের প্রশিক্ষক রাখি মজুমদার বলেন, প্রায় ১৭ থেকে ১৮ বছর এই সিঁড়ির নিচে দুলাল দা পেঁয়াজু বিক্রি করছেন। আমরাও প্রায়ই টিফিন হিসেবে তার দোকান থেকে চপ-পেঁয়াজু কিনে খাই। দাদার সততাময় ব্যবসার সফলতা দেখে জীবন সংগ্রামে আমরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছি।
এ বিষয়ে দুলাল দাস বলেন, এক সময় শহরের অযাচক আশ্রমে থাকলেও পরবর্তীতে জায়গা কিনে সাহা বাড়ি এলাকায় থাকার মতো একটা ঠাঁই করেছি। গ্রিলের ওয়ার্কশপে কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও সংসারের খরচ পোষাতে না পেরে গেল ১৭ থেকে ১৮ বছর যাবৎ এখানেই সিঁড়ির নিচ ভাড়া নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে কোনোমতে চপ-পেঁয়াজু বিক্রি করে টিকে আছি। দিনে হাজার ১২০০ টাকা সামান্যতম আয় হয়। যা দিয়েই সংসারের খরচ, এখানকার ভাড়া, ব্যবসার পুঁজি ও ছেলেদের পড়ালেখার খরচ বহন করছি। যদি একটা বয়স্ক ভাতাসহ সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতাম তাহলে কিছুটা উপকার হতো।
মন্তব্য করুন