ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি-জমার দলিল সম্পাদনে দীর্ঘদিন ধরে গলাকাটা ফির নামে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত টানা না দিলে কাজ হয় না এই অফিসে। তবে নবনিযুক্ত রেজিস্ট্রার অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
জানা যায়, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পেশকার, মুহুরি বা সংশ্লিষ্টদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে উপজেলার কৃষক, শ্রমিক, মজুর ও সাধারণ মানুষ সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত মোটা অঙ্ক ব্যয় করে দলিল সম্পাদন করতে বাধ্য হচ্ছেন। অফিসের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ফি আদায়ের তালিকা টানানো থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। তালিকায় বিভিন্ন প্রকৃতির দলিলের মধ্যে সাফ-কবলা, হেবা ঘোষণাপত্র, দানপত্র ও বন্ধকী দলিল সম্পাদনের জন্য পৃথক ফি উল্লেখ রয়েছে। তারপরও উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিটি হেবা-ঘোষণাপত্র দলিল রেজিস্ট্রির জন্য সরকার নির্ধারিত ফি রয়েছে মাত্র ১ হাজার ২৩০ টাকা। কিন্তু ৫০ লাখ টাকা মূল্যমানের হেবা-ঘোষণাপত্র দলিল সম্পাদনের জন্য অফিসে গিয়ে একজন জমি ক্রেতার কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অন্তত ৬০ হাজার টাকা।
উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের এক মুহুরি জানান, প্রতিটি দলিল সম্পাদনের বিপরীতে দলিলে উল্লিখিত জমির মোট মূল্যের ওপর ১ শতাংশ টাকা অফিসকে দিতেই হবে। এই ১ শতাংশ টাকা অফিসকে না দিলে দলিল সম্পাদন হয় না। এ ছাড়া অফিসের মুহুরি ও অন্যান্য কর্মচারীর জন্যও খরচ দিতে হয়। তাই ৫০ লাখ টাকা মূল্যমানের একটি হেবা-ঘোষণাপত্র দলিল সম্পাদনের জন্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ লেগে যায়।
তিনি আরও জানান, এ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একটি সিন্ডিকেট করে রাখা হয়েছে, বিধায় জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্ক না নিয়ে দলিল সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া সাফ-কবলা দলিল সম্পাদনের জন্য সরকারি ফি হচ্ছে জমি মূল্যের প্রতি লাখে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে। সেখানে ওই অফিসের মুহুরিরা জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতি লাখে প্রায় ১০ হাজার টাকা করে। আবার অফিসকে দিতে হচ্ছে জমির মোট মূল্যের আরও ১ শতাংশ টাকা। এতে উপজেলার জমি ক্রেতারা প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত অর্থ দণ্ড দিয়ে চলেছেন।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদন করতে এসে উপজেলার কেএম ডাঙ্গী গ্রামের শেখ আক্কাস জানান, ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জমির দলিল সম্পাদন করার জন্য সরকারি ফি বাবদ এক মুহুরি আমার কাছ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এ ছাড়া অফিস ও অন্যান্য খরচ বাবদ আরও ২০ হাজার টাকাসহ দলিল সম্পাদনের জন্য আমার প্রায় ২ লাখ টাকা লেগে গেছে। কিন্তু দলিলটি সম্পাদনের জন্য ৭৫ হাজার টাকা সরকারি ফি আদায়ের বিধান রয়েছে।
আরেক জমি ক্রেতা শহিদুল ইসলাম প্রামাণিক জানান, দানপত্র দলিল সম্পাদনের জন্য ২ শতাংশ উৎস কর নেওয়ার কোনো বিধান নেই। কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মুহুরিরা আমাদের কাছ থেকে ২ শতাংশ উৎস করের টাকাসহ অফিস খরচ বাবদ অতিরিক্ত ১ শতাংশ টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর এসব অতিরিক্ত অর্থ না দিলে বিভিন্ন আইনি জটিলতা দেখিয়ে দলিল সম্পাদন বন্ধ রাখা হয়।
এ ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের একটি নকল উঠাতে সরকারি ৩৩০ টাকা ফির স্থলে জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কামরুল হাসানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি মাস খানেক ধরে এ অফিসের দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিটি দলিল সম্পাদনের জন্য অফিসকে অতিরিক্ত ১ শতাংশ টাকা দিতে হয় বলে আমার জানা নেই। তবে এ অফিসে যদি এরকম কোনো কিছু চলতে থাকে তাহলে আমি তা বন্ধের জন্য ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য করুন