নৌবাহিনীর সদস্য পরিচয়ে বিভিন্ন স্থানে একে একে ১৩টি বিয়ে করেছেন মইদুল ইসলাম (২৭) নামে এক যুবক। গ্রামের সাধারণ মুসলিম পরিবার ছিল তার মূল টার্গেট। সরলতার সুযোগ নিয়ে বিয়ে করে কিছুদিন সংসার করে তারপর নানা কৌশলে টাকা আত্মসাৎ পালিয়ে যেত। তার প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পায়নি প্রতিবন্ধী নারীও।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা। গ্রেপ্তার মইদুল মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর চর কটারি এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার লালমা এলাকার বাসিন্দা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে বিয়ে করে মইদুল। বিয়ের পর তিন দিন স্ত্রীর বাড়িতে অবস্থান করেন তিনি। এ সময় সাভারের আশুলিয়ায় ৮ শতাংশ জমি কিনেছেন এবং কিছু টাকা বাকি আছে বলে শ্বশুরবাড়িতে জানান। বাকি টাকা পরিশোধের কথা বলে শ্বশুরের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা ধার নিয়ে আশুলিয়া হয়ে খুলনার উদ্দেশে চাকরিতে যোগদানের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়।
কিছুদিন পর আরও ২ লাখ টাকা ধার নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ ৬ মাস যোগাযোগ না থাকায় ওই ছাত্রী খোঁজ নিতে গেলে মইদুলের আরও কয়েকজন স্ত্রীর সন্ধান পায়। পরে ওই ছাত্রী বাদী হয়ে তারাকান্দা থানায় মামলা দায়ের করেন।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকা থেকে মইদুলকে এবং তারাকান্দা থেকে ঘটক কুদ্দুছ আলীকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর মইদুলের প্রতারণার স্বীকার ১৩ নারী ডিবি কার্যালয়ে ছুটে আসেন।
যার মধ্যে ময়মনসিংহের ছয়জন, মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের তিনজন করে এবং কিশোরগঞ্জের এক নারী রয়েছে। মইদুলের এই প্রতারক চক্র এসব পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লক্ষেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমনকি তার এই প্রতারণার ফাঁদ থেকে প্রতিবন্ধী নারীও রেহাই পায়নি। মাসিক প্রতিবন্ধী ভাতার সামান্য টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে সে টাঙ্গাইল জেলার একজন প্রতিবন্ধী নারীকে বিয়ে করে।
পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, নৌবাহিনীর এমএলএসএস হিসেবে দুই বছর চাকরি করার পর বিধি-বহির্ভূতভাবে বাল্যবিয়ে করার অপরাধে চাকরি হারায় মইদুল। এরপর প্রতারণার মাধ্যমে বিয়েকেই তার পেশা হিসেবে বেছে নেয়। তার এ কাজে বিজিবি থেকে চাকরিচ্যুত এক সদস্য তাকে সরাসরি সহায়তা করে। গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামি কুদ্দুছসহ অন্যরা কখনও ঘটক কখনও মহিদুলের নিকট আত্মীয় হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে অভিভাবকদের বিশ্বাস অর্জন এবং প্রতারণার অপকৌশল বাস্তবায়নে সংঘবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, আসামি মইদুলের কাছে নৌবাহিনীর ভুয়া আইডি কার্ড, বাহিনীর ব্যবহার্য ট্রাকস্যুট এবং বিভিন্ন বাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি পাওয়া গেছে। মহিদুলসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে জামালপুর ও টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক প্রতারণা মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।
মন্তব্য করুন