শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২
মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫০ এএম
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:১০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ঝাড়ু ফুলে পাহাড়িদের জীবিকা

মাটিরাঙ্গা বাজারে ফুলঝাড়ু কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহের কমতি নেই। ছবি : কালবেলা
মাটিরাঙ্গা বাজারে ফুলঝাড়ু কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহের কমতি নেই। ছবি : কালবেলা

শীত মৌসুমে পাহাড়ি অঞ্চলে ঝাড়ু ফুল ফোটার পূর্ণাঙ্গ সময়। প্রাকৃতিকভাবে পাহাড়ের ঢালু জমিতে এ ফুল ফোটে। আর এ ফুল দিয়েই তৈরি করা হয় ফুল ঝাড়ু। তাইতো পাহাড়ে বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের লোকজন এটি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাজারে বিক্রি করে চলে তাদের সংসার। ঝাড়ু ফুল পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত হয়। গ্রাম থেকে শহরে এমনকি বিত্তবানদের ঘরেও এ ঝাড়ু ফুল আঁটি বেঁধে বেশ আগ্রহের সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়। কারণ পরিচ্ছন্নতার যত আধুনিক ও বিকল্প পণ্য থাকুক না কেন, ঝাড়ু ফুলের কোনো বিকল্প নেই। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হওয়া ঝাড়ু ফুল এ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সমতলের বিভিন্ন জেলাতেও চাহিদা মেটাচ্ছে। এ ঝাড়ু ফুল বিক্রি করে বহু পরিবার জীবন নির্বাহ করছে। একই সঙ্গে ঝাড়ু ফুল বিক্রি করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে উঠেছেন এ অঞ্চলের নারী-পুরুষরা। পাহাড়ের উর্বর মাটিতে পরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঝাড়ু ফুলের আবাদ করা হলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

মাটিরাঙ্গায় সাপ্তাহিক হাটে গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়কের পাশে ঝাড়ু ফুলকে আঁটি বেঁধে সাজিয়ে সারি সারি করে ক্রেতার আশায় দাঁড়িয়ে আছেন বিক্রেতারা। অনেককে আবার পাইকারদের কাছ থেকে ক্রয় করে বেশি লাভে বিক্রির আশায় ফুল নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

মাটিরাঙ্গার আটবাড়ি, কালা পাহাড়, সাপমারা, নতুন পাড়া, রসুলপুরসহ বিভিন্ন গহিন পাহাড়ের পাদদেশ থেকে এসব ফুল সংগ্রহ করে বিক্রি করতে হাটের দিন নিয়ে আসেন তারা। নিজ এলাকা থেকে বাজারের দূরত্ব বেশি হওয়ায় অনেকে হোন্ডায় বা বিভিন্ন যানবাহনে করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন মাটিরাঙ্গা বাজারে। ২০-৩০ শলাকা ফুল দিয়ে একটি ঝাড়ুর আঁটি বাঁধা হয়। প্রতিটি আটি আকার ও মানভেদে ১৫-২০ টাকা বিক্রি করা হয়। কিন্তু পরবর্তিতে হাত বদলে ঝাড়ু ফুলের এ স্টিক ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এক বান্ডিল ফুলে ৫০-১০০টি আঁটি থাকে। প্রতিটি বান্ডিল ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। মানভেদে এর দাম কমবেশি হতে পারে। পাহাড়ি নারীরা জুমচাষ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পাহাড় থেকে ফুল ঝাড়ু সংগ্রহ করে মাথায় করে নিয়ে এসে স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করে। তারা সংসারে বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে এটিকে বেছে নিয়েছে।

ঝাড়ু ফুল বিক্রেতা উসেপ্রু বলেন, পাহাড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে ঝাড়ু ফুল কেটে আঁটি তৈরি করে প্রতি সপ্তাহের শনিবার মাটিরাঙ্গা বাজারে বিক্রি করি। যা পাই তা দিয়ে পরিবারের জন্য বাজার কিনে নিয়ে যাই।

আরেক বিক্রেতা মংসেপ্রু জানান, কাঁচা ফুলের ২০টি শলাকা দিয়ে তৈরি প্রতিটি আঁটি ২০ টাকা করে বিক্রি করি। আমি প্রতি সাপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ আঁটি ঝাড়ু বিক্রি বিক্রি করি ১ হাজার টাকায়। এটি আমার পরিবারের বাড়তি আয়। এ দিকে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি বাঙালিদের কাছ থেকে পাইকারি দামে ঝাড়ু ফুল কিনে রোদে শুকিয়ে ঝাড়ুর আঁটি বানিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে সরবরাহ করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। এগুলোকে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে ঝাড়ু দেওয়ার মতো সম্পূর্ণ উপযুক্ত করে বাঁধা হয়। এরপর ঝাড়ুফুলগুলোকে বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হয়। ঝাড়ু ফুল ব্যবসায়ী সুমন জানান, দীর্ঘ বছর ধরে পাহাড়ের নিম্ন আয়ের লোকজনদের কাছ থেকে পাইকারি দরে ঝাড়ু ফুলের আঁটি কিনে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম-ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি। সিজন আসলে আমি ঝাড়ু ফুলের ব্যবসা করি। সিজন চলে গেছে ব্যাবসা পরিবর্তন করি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে পাহাড়ের মানুষের আর্থিক সংকট নিরসনে ঝাড়ু ফুল শিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মন্তব্য করেন মাটিরাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ভুইয়া। পরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঝাড়ু ফুলের আবাদ করা হলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো উলফুল ঝাড়ু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ অঞ্চলে পিছিয়ে পরা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আর্থিক সংকট নিরসনে ঝাড়ু ফুল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত: রাষ্ট্রদূত আনসারী

লা লিগার কাছে যে অনুরোধ করতে চায় বার্সা

‘নির্বাচনে আমলাদেরকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে’

সাবেক এডিসি শচীন মৌলিক কারাগারে

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন শনিবার, যেসব বিষয়ে আলোচনা

সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের শানে রিসালাত সম্মেলন

শেষ দিনেও ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে মতামত দেয়নি ৭ রাজনৈতিক দল

ইউরোপের লিগগুলোতে দল কমানোর প্রস্তাব ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তির

নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে মৃত্যুর মিছিল, তিন বছরে প্রাণ হারান ১৮৩ জন

১০

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

১১

সুদ দিতে না পারায় বসতঘরে তালা, বারান্দায় রিকশাচালকের পরিবার

১২

দেশ বাঁচাতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে : চরমোনাই পীর

১৩

এএসপির বাসায় চাঁদাবাজি-ভাঙচুর, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৪

জেলের জালে বড় ইলিশ, ৯ হাজারে বিক্রি 

১৫

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন নিয়ে নতুন নির্দেশনা

১৬

আগামী সংসদ প্রথম তিন মাস ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব

১৭

ধরলার তীব্র ভাঙন, টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি

১৮

নেতা ও ভোটারের জবাবদিহিই হবে শ্রেষ্ঠ সংস্কার : মঈন খান

১৯

পাপের ফল ওদের ভোগ করতেই হবে : রাশেদ খান

২০
X