ঢাকার সাভারের গোলাপ গ্রামে কমছে ফুলের আবাদ। বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির আগ্রাসনে দিন দিন কমছে কৃষি জমিও। অজানা ছত্রাকের আক্রমণে নষ্ট হয়েছে গোলাপের কুড়ি। তাই সম্ভাবনাময় এই খাতটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত স্থানীয় গোলাপ চাষিরা। ফাগুনের মতো প্রাণ খোলা হাসি নেই এখন সাভারের গোলাপ গ্রামের গোলাপের বাগানে। কুঁড়িতে কুঁড়িতে লাগে না খুশির দোল। অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে কমেছে ফুলের উৎপাদন। সেই সঙ্গে আবাসনের যান্ত্রিক ভূত গিলে খাচ্ছে ফুলচাষের ভিটেমাটি। অথচ পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে ফুলের চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে ফুলের বাণিজ্যিক চাহিদা। এই চাহিদার বাণিজ্যিক মূল্য আমলে নিয়ে এখনও সরব সাভারের বিরুলিয়া গ্রামের ফুল চাষিরা।
সাভারের চাষ করা ফুল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। এতে গ্রামটিতে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়। তবে, এবারের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির আগ্রাসনে কমছে আবাদি জমি। কমছে ফুলের চাষ। আবার কোথাও কোথাও অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে ব্যাহত হচ্ছে ফুলের উৎপাদন। চলতি মৌসুমে ফুলচাষকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন বোনেন ফুল চাষিরা। নানা সংকটে চাষির ঠোঁটের হাসি হয়েছে মলিন। চোখভরা স্বপ্ন খানিকটা ফিকে হয়ে তৈরি হচ্ছে লোকসানের শঙ্কা।
উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে এবছর ৩০৫ হেক্টর জমিতে গোলাপসহ বিভিন্ন ফুলের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে গোলাপ চাষ হয়েছে ২৩০ হেক্টর জমিতে। এ বছর শুধু গোলাপের ক্ষেত্রে ৩৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকার লক্ষমাত্রা ধরা হলেও আদৌতে এ লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
শ্যামপুর এলাকার জমি বর্গা নিয়ে গোলাপ চাষ করা ওমেদ আলী জানান, একদিকে অজানা ছত্রাকে নষ্ট হচ্ছে গোলাপ গাছ ও ফুল অন্যদিকে আবাসন কোম্পানিগুলো গোলাপ চাষের উপযোগী বেশ কিছু জমি কিনে মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করে চড়া দামে বিক্রি করছে প্লট আকারে। ফলে কমছে জমি, কমছে ফুলের উৎপাদন। এ ছাড়াও জমি না পাওয়ায় অনেক গোলাপ চাষিই বদলাচ্ছেন তাদের পেশা। গোলাপ চাষের উপযোগী জমিগুলো রক্ষায় এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে হয়তো এক সময় বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রাম থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে গোলাপসহ বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ।
স্থানীয় ফুল ব্যাবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, বছরের এই সময়টাতে আমাদের এখানে ফুলের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। শুধু এই সময়টিকে কেন্দ্র করেই প্রায় কয়েক কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয় এখানে। তবে এ বছর ছত্রাকের আক্রমণে ফুলের আবাদ অনেক কম। এ ছাড়া ইদানিং স্থানীয় জমির মালিকরা তাদের জমিগুলো বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়ার যারা বর্গা চাষি ছিল তারা চাষের জন্য জমি পাচ্ছেন না। তাই দিন দিন কমছে গোলাপ চাষের ক্ষেত্র।
বিরুলিয়া এলাকার সমাজকর্মী মো. মাজেদুল হক কালবেলাকে বলেন আমার বাড়ির আশপাশের এলাকাগুলোতে এক সময় গোলাপ চাষ করা হলেও এখন সেগুলো বসতভিটা হয়ে গেছে। এ ছাড়াও জমির মূল মালিক চড়া দামে হাউজিং কোম্পানিগুলোর কাছে জমি বিক্রি করে দেওয়ায় বর্গা চাষিরাও তাদের জমি হারাচ্ছেন। নানা কারণে কমছে গোলাপ চাষি এবং চাষের জমি।
এদিকে ফসলি জমি রক্ষাসহ গোলাপের ছত্রাক নিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানার দেওয়া তথ্যানুযায়ী গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন ফুল চাষের জমির পরিমাণ ৩০৫ হেক্টর হলেও বাস্তবে চাষের জমির পরিমাণ কমেছে বেশ। আর ছত্রাক নিরোধে আমাদের কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হয়ে ফুলচাষে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মন্তব্য করুন