আজহার ইমাম, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

লেখাপড়ার খরচ চালাতে কামারের কাজ করেন অর্জুন

বই কেনার টাকা জোগাড় করতে কর্মকারের কাজ শুরু করছেন অর্জুন কর্মকার। ছবি : কালবেলা
লেখাপড়ার খরচ চালাতে কামারের কাজ করেন অর্জুন

ক্লাসে যাবেন বই নেই, বই কেনার টাকা নেই, তাই বই কেনার টাকা জোগাড় করতে কর্মকারের কাজ শুরু করছেন অর্জুন কর্মকার। ছোটবেলা থেকেই কষ্ট, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সঙ্গে বসবাস তার। অনেক কষ্টে পড়ালেখা চালিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু ক্লাসে যাওয়ার জন্য বই, পোশাকাদি ও যাতায়াত খরচের অভাব নিত্যদিনের। ফলে ক্লাস ছেড়ে কর্মকারের কাজই একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্জুনের।

১৭ বছরের তরুণ অর্জুন কর্মকারের বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে। তার বাবা রিকশাচালক দুলাল কর্মকার ও মা কৃষি শ্রমিক শান্তি রানী। সংসারের অভাব-অনটনেই তার বেড়ে ওঠা। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রতিবেশী প্রদীপ কুমারের দোকানে কাজ শেখা শুরু করেন অর্জুন। লেখাপড়া আর কাজ শেখা দুটিই চলে সমানতালে।

দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় অর্জুন বাড়ির কোণায় একটি ছোট দোকান দেন। দিনের বেলা দোকানে কাজ আর রাতের বেলায় চলে পড়ালেখা। করোনা মহামারির সময় অসুস্থ বাবার আয় বন্ধ হওয়ায় সংসারের হাল ধরেন অর্জুন। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্তই কাটে তার কামারশালায়।

অর্জুন ২০২৩ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৩ দশমিক ৩৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে দোকানের জায়গা পরিবর্তন করেন। প্রায় এক বছর হলো নিজের গ্রাম সংলগ্ন মহাসড়কের পাশে ১ হাজার ৫০০ টাকা মাসে ভাড়ায় একটি দোকান নিয়েছেন অর্জুন। দোকানের বারান্দায় চলে লৌহজাত জিনিসপত্র তৈরির কাজ। গত অক্টোবরে গ্রাম থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে কাটলা ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন অর্জুন। সেখানে বাকি পড়ে আছে ভর্তি ফি। এক সেট বই কেনার টাকা জোগাড় না হওয়ায় কলেজে ক্লাসের বেঞ্চে বসা হয়নি তার।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে দুর্গাপুর গ্রামে অর্জুনের কামারশালায় গিয়ে দেখা যায়, ভাতিতে আগুন জ্বলছে, কয়লার আগুনে গরম হচ্ছে লোহা। লাল টকটকে লোহা চিমটা দিয়ে ধরে আছে নবম শ্রেণি পড়ুয়া ছোট ভাই অজিত কর্মকার। আর সেই গরম লোহাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কাস্তের রূপ দিচ্ছেন বড় ভাই অর্জুন। কাজের ফাঁকে কথা হলো অর্জুনের সঙ্গে।

তিনি বললেন, এই কাজ করে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে চারজনের সংসার কোনোমতে চলে। বাবা অসুস্থ। একসঙ্গে এক সেট বই কেনার টাকা জোগাড় করতে পারছেন না। ফলে কলেজের ক্লাসেও যেতে পাচ্ছেন না। লেখাপড়া করে সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা তার।

এ বিষয়ে কাটলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হান্নান বলেন, কলেজের পরিচয়পত্র দেখিয়ে পাঠাগার থেকে বই সংগ্রহ করে অর্জুনের বই পড়ার সুযোগ আছে। অর্জুন কলেজে এলে শিক্ষকরাও তাকে লেখাপড়ার বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সৈকতে ফের ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

১০

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

১১

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

১২

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

১৩

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

১৪

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

১৫

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার : উপদেষ্টা আসিফ

১৬

পিয়াইন নদীতে অবাধে বালু লুট, হুমকিতে বসতবাড়ি 

১৭

সোনালী ও জনতা ব্যাংকের অফিসার পদের ফল প্রকাশ

১৮

নরসিংদীতে একজনকে কুপিয়ে হত্যা

১৯

হোয়াটসঅ্যাপে নতুন কৌশলে অর্থ চুরি, যেভাবে নিরাপদ থাকবেন

২০
X