শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৭:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঝুপড়ি ঘরে রানুর মানবেতর জীবন

ঝুপড়ি ঘরের সামনে রানু বেগম। ছবি : কালবেলা
ঝুপড়ি ঘরের সামনে রানু বেগম। ছবি : কালবেলা

পলিথিন ও পুরাতন কাপড় দিয়ে তৈরি করা ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন রানু বেগম। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া ইউনিয়নের পূর্বনলতা গ্রামের মালদ্বীপ রাস্তার মাথায় তার বসবাস।

একটু সহজ-সরল হওয়ার কারণে স্বামী হাকিম খান তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। দুই ছেলেও তার কোনো খোঁজ নেয় না। তাই বাবার বাড়ির এলাকায় ইরির ধানের ব্লকের পাশে রাস্তার ওপর একটি চুলা বানিয়ে রান্না করে খায়। চুলার পাশেই কলাগাছের নিচে একটি ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে সেখানেই রাত কাটান রানু বেগম।

পিতা হাকিম ছৈয়াল ও মাতা মেহেরজান অনেক ধুমধামে কেদারপুরের সাহেবের চরে হাকিম খানের কাছে বিয়ে দেন রানু বেগমকে। কিন্তু পর পর তিনবার পদ্মার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে যায় রানুর পরিবার।

জীবিকার তাগিদে দুই ছেলে ঢাকায় কাজ করে খান। তারা তার মায়ের কোনো খবরও নেন না। স্বামীও অন্য মহিলাকে বিয়ে করে চলে গেছে অজানা গন্তব্যে। তাই বাধ্য হয়েই একা একা রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রানু বেগম।

রানু বেগম বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙনের ফলে পরপর তিনবার আমাগো বাড়ি-ঘর জমিজমা সবকিছু শেষ হয়ে যায়। আমার স্বামী ও সন্তানরাও আমাকে ছেড়ে চলে যায়। কোনো উপায় না পেয়ে বাবার বাড়িতে আসছি। আমার ভাইয়রাও গরিব তাই তাদেরও থাকার মতো ঘর নাই। আমি কই থাকুম তাই বিলের পাশে কলাগাছের নিচে একটি ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে থাকি। আর এ রাস্তাতেই একটা চুলা বানায়া রান্না করে খাই। বৃষ্টি আইলে আর রানতে পারি না। রাইতে বৃষ্টি আইলে না ঘুমায়ে কাপড় মুড়ে বসে থাকি। গায়ের কাপড়, কাথা ও সবকিছু ভিজে যায়। বৃষ্টিতে ভিজি, পানিতে ভিজি, ভেজা মাটিতে আমার ঘর ভরে যায়।

সরকার যদি আমারে একটা ঘর বানায়া দিত তাইলে আমি থাকতে পারতাম। এ কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ওঠেন রানু বেগম।

রানু বেগমের বড়ো ভাই নূরুল হক ছৈয়াল বলেন, আমার বইনের কোনো জমি-জিরাত নাই। সবকিছু পদ্মায় লয়া গেছে। ওর স্বামী ও পোলারাও ওরে থুয়া গেছে। আমারতো বইন। তাই বাপের কিছু জমি আছে, অহনতনে বইনেরে একটু দিছি। আমরাও গরিব, তয় ওরে কে একটা ঘর দিব।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. বিল্লাল আকন বলেন, রানু বেগম অনেক দিন ধরে এ রাস্তায় বসবাস করছেন। আমাদের এলাকার গরু-ছাগলেরও এর থেকে ভালো ঘর আছে। সরকার যদি তাকে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে তাইলে অনেক ভালো হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ফারুক বলেন, রানু বেগমের বিষয়টি আমাদের কাছে কেউ বলেনি। মাত্রই আপনাদের কাছে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করব।

ভূমখাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আপনারা এ খবর কেমনে জানলেন। তাছাড়া এখন মুজিববর্ষের ঘর নেই। আমি ঢাকা আছি, ঢাকা থেকে এসে ইউএনও অফিসে কথা বলে তার জন্য ত্রাণের টিনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।

নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. পারভেজ কালবেলাকে বলেন, গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার কাজ করছে। এ ছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের সরকার জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। তাছাড়া এ বিষয়টি আমি আপনার কাছে থেকে জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পাঠিয়েছি। আশা করছি অতি দ্রুতই রানু বেগমের মাথাগোঁজার ঠাঁই হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এসএমসিতে চাকরির সুযোগ, আজই আবেদন করুন

সিদ্ধিরগঞ্জে বিস্ফোরণে নাতির পর নানির মৃত্যু

ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন আজ

আজ ঢাকার আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

২৬ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

ডাকসু নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু আজ

তিন সহযোগীসহ ‘মাদক সম্রাট’ শাওন গ্রেপ্তার

ফের সৈকতে ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

২৬ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১০

পাঁচ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ

১১

ক্ষমতায় গেলে এক কোটি কর্মসংস্থান করবে বিএনপি : টুকু

১২

ড. ইউনুস কি ভালো ভোট করতে পারবেন : মান্না

১৩

ষড়যন্ত্রকারীদের সতর্কবার্তা দিলেন আমিনুল হক

১৪

স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু, চাচাতো চাচা রফিকুল রিমান্ডে 

১৫

জবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা মনিটরিং সিস্টেম চালু ১ সেপ্টেম্বর

১৬

স্থপতি মোশতাক আহমেদের বাবার মৃত্যুতে রাজউক চেয়ারম্যানের শোক

১৭

আফ্রিদির বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারি, উকিল খুঁজছেন স্বপন

১৮

মুন্সিগঞ্জে ‘গত আগস্টে লুট করা অস্ত্র’ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা

১৯

গরিবের স্বপ্নেই থাকে ইলিশ

২০
X