খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জমি লিখে দিয়েও চাকরি পাননি আবু বকর

ভুক্তভোগী আবু বকর ছিদ্দিক। ছবি : কালবেলা
ভুক্তভোগী আবু বকর ছিদ্দিক। ছবি : কালবেলা

খুলনা কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট অফিসের জন্য জমি দান করেও চাকরি পাননি আবু বকর ছিদ্দিক। দীর্ঘ এক যুগ ধরে চাকরির জন্য অফিসের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। সর্বশেষ স্থানীয় চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়ে মাঝির কাজটিও হারাতে বসেছেন আবু বকর। কাজ হারিয়ে অনেকটা অসহায় জীবনযাপন করছেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনার কয়রা উপজেলায় দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা গ্রামে কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট অফিসের একটি ল্যান্ড কাস্টমস অফিস রয়েছে। ভারত থেকে আসা জাহাজের তল্লাশি, সিলগালা এবং ছাড়পত্র দেওয়া হয় এই ল্যান্ড কাস্টমস অফিস থেকে। এই অফিসে দুজন ইন্সপেক্টরসহ পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত অবস্থান করে। তবে অত্যন্ত দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানে অফিসারদের থাকা খাওয়ার নানা রকম অসুবিধা হতো। লোকালয় থেকে জাহাজে অফিসারদের আনা-নেওয়া করার জন্য কয়েকজন নৌকা বা ট্রলার মাঝি নিয়মিত কাজ করে।

সেই মাঝিদের মধ্যে আবু বকর একজন। ১৯৯২ সাল থেকে আবু বকর এই অফিসে মাঝি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। স্টেশনটি দুর্গম এলাকায় হওয়ার কারণে অফিসারদের নানা ধরনের অসুবিধা পোহাতে হতো বিভিন্ন সময়ে। এরই মধ্যে ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে পুরোনো কাস্টমস অফিসটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর সেখানে অফিসিয়াল কার্যক্রম চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের। সংকট মোকাবিলায় আবু বকরের পৈতৃক জমিতে অস্থায়ীভাবে অফিসের কার্যক্রম শুরু করে কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট অফিস কর্তৃপক্ষ। পরে ২০১২ সালে ওই জমির মধ্যে প্রায় ৫ বিঘা ৭ কাঠা জমি ল্যান্ড কাস্টমস অফিসের নামে দান দলিল করে দেন আবু বকর। তার জমি দান করার বিপরীতে তাকে কাস্টমস অফিসে এমএলএসএস হিসেবে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় তৎকালীন কাস্টমস কমিশনার হুমায়ুন কবির। এরপরও সেই শর্ত মোতাবেক তাকে এমএলএসএস পদে নিয়োগ না দিয়ে তাকে কন্টিনজেন্ট স্টাফ হিসেবে (কাজ নেই মজুরি নেই ভিত্তিতে) চাকরিতে যোগদান করতে অফিসিয়াল চিঠি ইস্যু করে। যার স্মারক নং-২য়/৫(৪র্থ)২- ইটি-৮৯/(অংশ-২)/৮০৬(১-১০)।

এরপর থেকে তিনি সেই পদে চাকরি করা শুরু করেন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি এভাবেই অফিসটিতে কাজ করতে থাকেন। তবে ২০১৫ সালে এসে সরকার কাজ নেই মজুরি নেই ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া জনবল অপসারণ শুরু করে। সেই তালিকায় সারা দেশের অন্যদের মতোই নাম ওঠে আবু বকরের। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ৩৫ জন কর্মচারী আদালতের স্মরণাপন্ন হন। পরে আদালতের রায় অনুযায়ী ২৫ জনকে সরকারিকরণ করে সরকারি এ দপ্তরটির কর্মকর্তারা। বাকি ১১ জন পুনরায় আপিল করে। সেটি এখনো চলামান। সেই অবস্থার মধ্যেই তারা বিনা বেতনে দীর্ঘ আট বছর কাজ করে যাচ্ছে। বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। চাকরিবঞ্চিত ১১ জনের মধ্যে আংটিহারা স্টেশনের আবু বকরও রয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে স্টেশনের কতিপয় কর্মচারীর বিরোধ দেখা দেয়।

যার জেরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলী, স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর ক্যাডার হিসেবে পরিচিত মিলন খান ও চিহ্নিত হরিণ শিকারি লক্ষন মুন্ডার নেতৃত্বে অফিসের মাঝিদের ওপর চরম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। শ্রমিক ইউনিয়নের কার্ডধারী মাঝিদের বাদ দিয়ে বাইরের লোক এনে মাঝি হিসেবে কাজ করাচ্ছে তারা।

অভিযোগ উঠেছে, এদের দিয়ে ভারত থেকে মদ, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন অবৈধ মালামাল পাচার করা হচ্ছে অহরহ। যা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলীর বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যা মামলা রয়েছে। যা নিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল হয়েছে। এ ঘটনায় তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এছাড়াও কয়েকদিন আগে ঘাট দখল নিতে ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলী, মিলন খান ও লক্ষন মুন্ডার নেতৃত্বে একটি চক্র আবু বকরসহ ইউনিয়নের শ্রমিকদের হুমকি দেয়। যা নিয়ে ভুক্তভোগী আবু বকর কয়রা থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করে। বর্তমানে ওই স্টেশন ঘাটে ইউনিয়নের কার্ডধারী প্রকৃত শ্রমিকরা ভিড়তে পারছে না। তাদের সব ধরনের পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, দীর্ঘদিন চাকরি করলেও আমাকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। কমিশনারেট অফিসের জন্য আমি আমার পৈতৃক সম্পত্তি দান দলিল করে দিয়েছি। দক্ষিণ বেদকাশী চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী মহল আমাকে ঘাট থেকে বের করে দিতে তৎপরতা চালাচ্ছে। আমি এর ন্যায্য বিচার চাই।

এ বিষয়ে জানতে কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট খুলনার কমিশনার সৈয়দ আতিকুর রহমানের (চলতি দায়িত্ব) কাছে একাধিকবার জানতে মোবাইলে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠালে তিনি এডিসি সফিউজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে এডিসিকে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতে প্রবল বৃ‌ষ্টি, কুড়িগ্রামে ভেসে আসছে হাজার হাজার গাছ

বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বিতর্ক, পাক অধিনায়ক জড়ান তর্কে

ইন্দোনেশিয়ায় স্কুল ভবনধসে মৃত্যু ৫০

ভারতে হাসপাতালে আগুন, আইসিইউতে ৬ রোগীর মৃত্যু

কীভাবে নির্বাচিত হন বিসিবি সভাপতি, জেনে নিন পুরো প্রক্রিয়া

সময় এসে গেছে, ইনশাআল্লাহ দ্রুতই দেশে ফিরব : তারেক রহমান

জুলাই আন্দোলনে আমি আমাকে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না : তারেক রহমান

জুবিন গার্গের মৃত্যুরহস্যে নতুন মোড়, সামনে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

শেখ সাদি তোমার প্রেমিক? উত্তরে যা বললেন পরীমনি

বহুল আলোচিত বিসিবি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে

১০

করতোয়া নদীতে নৌকাবাইচে সংঘর্ষ, আহত ১৭

১১

সন্ধ্যার মধ্যে ৭ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির আভাস

১২

গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, অতঃপর...

১৩

লাউয়াছড়ায় গাড়ি পার্কিংয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

১৪

আলোচিত বেগমপাড়ায় কার কয়টি বাড়ি-ফ্ল্যাট

১৫

মালিক বাড়িতে নেই, গরু বিক্রি করে লাপাত্তা কর্মচারী

১৬

শয়তানের নিশ্বাস ছড়িয়ে গৃহবধূর সর্বস্ব লুট

১৭

যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্প / দরকষাকষি চলছে, আরও সময় লাগবে

১৮

সকালে ঘুম থেকেই উঠেই কি মোবাইল ফোন ঘাঁটেন, হতে পারে যেসব বিপদ

১৯

সাগরে মিলল ১২ কোটি টাকার গুপ্তধন

২০
X