বোরো মৌসুমে গোমতী ও মেঘনা নদীর পানি দিয়ে কৃষকদের সেচ সুবিধা প্রদান ও অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে কুমিল্লা দাউদকান্দির সুন্দলপুর সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পটি যে উদ্দেশ্যে চালু হয়েছিল এর কোনো সফলতা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ কৃষকই এই প্রকল্পের কথা জানেন না।
জানা গেছে, সুন্দলপুর সেচ প্রকল্পের কাজ ১৯৯৮-৯৯ সালে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০০৩-০৪ সালে। প্রকল্পের পাম্প হাউসে ১০টি পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ চালু নেই। মাত্র ৪-৫টি পাম্প সচল আছে।
যদিও রবি মৌসুমে (ডিসেম্বর-এপ্রিল) প্রকল্পটি সেচ পাম্প চালু থাকার কথা। কিন্তু এখনো কোনো পাম্প চালু হয়নি।
পৌরসভার দৌলদ্দি এলাকায় অবস্থিত প্রকল্পের পাম্প হাউস থেকে পৌর এলাকার প্রায় ৬০ হেক্টর জমির কৃষক এ প্রকল্পের সেচ সুবিধা পায়। কিন্তু সেখানেও এ বছর সেচের পানি যায়নি। প্রকল্পের ৮৫ ভাগ এলাকায় কৃষক এ প্রকল্পের কোনো সেচ সুবিধা পায় না।
খালগুলো ভরাট, দখল হয়ে যাওয়া, প্রকল্পে ব্যবহৃত পাম্পগুলোর অচল ও সংস্কারের অভাবে প্রকল্পে অধিকাংশ সেচযোগ্য জমি সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
সুন্দলপুর ইউনিয়নের সুখিপুর গ্রামের কৃষক নুরে আলম বলেন, সুন্দলপুর সেচ প্রকল্পের নামই শুনেছি, বাস্তবে এর সুবিধা আমরা পাইনি।
বারপাড়া ইউনিয়নের কৃষক শাহজাহান মিয়া বলেন, সুন্দলপুর সেচ প্রকল্প আছে বলে আমার জানা নেই। জন্মের পর থেকে স্কিমের পানি দিয়েই চাষ করে আসছি।
সুন্দলপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আসলাম মিয়াজী বলেন, সুন্দলপুর সেচ প্রকল্পটি কেবল নামেই আছে। অযথা সরকারের শত শত কোটি টাকা খরচ। এখান থেকে কৃষক কোনো সেচ সুবিধা পায় না। প্রকল্পের শুরু থেকে চোখে পড়ার মতো কোনো খাল পুনঃখনন কিংবা সংস্কার করা হয়নি। সামান্য সংস্কার হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সুন্দলপুর সেচ প্রকল্প একটি ব্যর্থ প্রকল্প।
দাউদকান্দি পৌরসভা ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর প্যানেল মেয়র মো. রকিব উদ্দিন রকিব কালবেলাকে বলেন, কৃষকদের সুবিধার্থে প্রকল্পটি পরিপূর্ণভাবে সেচ সুবিধা দিতে পারলে এলাকার কৃষক, কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক আবদান রাখতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের বেহাল দশার কারণ হলো, খালগুলোতে প্রচুর কচুরিপানা, খাল ভরাট, বেদখল হওয়ায় এ প্রকল্পের কৃষকদের দোরগোড়ায় পানি পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুতই খালের নাব্য ফিরিয়ে আনার জন্য ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার ও পুনঃখনন জরুরি।
সেন্দি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, প্রধান সেচ খাল এবং শাখা খালে কচুরিপানা ও খালগুলো পুনঃখনন না করায় উজানের দিকে আমরা পানি কম পাই। কচুরিপানা পরিষ্কার এবং খাল পুনঃখনন করে দিলে কৃষকরা নির্বিঘ্নে সেচের পানি পাবে।
তিনি আরও বলেন, সেচ এলাকাটি নিচু হওয়ায় ডিসেম্বর মাসেই কৃষকরা ফসল রোপণ করে। সেচ পাম্পগুলো যেন ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে চালু করে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান কালবেলাকে বলেন, প্রতিবছর সুন্দলপুর সেচ প্রকল্পের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে জানুয়ারি হতে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সেচ প্রদান করা হয়। বরাদ্দ অপ্রতুল হওয়ায় নিয়মিতভাবে এই প্রকল্পের বড়সড় রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর সমস্যা সমাধানে সুন্দলপুর সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসনের জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলমান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাদত হোসেন বলেন, কৃষি কাজে নির্বিঘ্নে পানি সরবরাহ করতে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বরাদ্দ পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এলাকার কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী উক্ত সেচ প্রকল্পের খালসমূহ পুনঃখনন ও কচুরিপানা পরিষ্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করব।
মন্তব্য করুন