মোগল আমলের শেষদিকে নির্মাণ হওয়া লাল মসজিদ মিঠাপুকুর উপজেলার একটি প্রাচীন স্থাপনা। দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনা নজর কেড়েছে দর্শনার্থীদের। তাই এখানে প্রতিদিন ভিড় লেগেই থাকে।
রংপুর-ঢাকা চারলেন মহাসড়কের মিঠাপুকুর উপজেলার গড়ের মাথা থেকে ৩০০ গজ পশ্চিমে ধানক্ষেতের মাঝে মসজিদটির অবস্থান। রংপুর মহানগরী থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৩০৮ কিলোমিটার।
মসজিদের প্রবেশদ্বারে সাঁটানো তথ্য থেকে জানা যায়, ১৮০২ সালে শেখ মোহাম্মদ সাবেরের ছেলে শেখ মোহাম্মদ আসার এটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫৮ মিটার এবং প্রস্থ চার দশমিক ৪২ মিটার। মসজিদের চারপাশে কৃষিজমি। তারই মাঝে মসজিদ। নিরিবিলি পরিবেশে এই মসজিদে ইবাদতে মনে এনে দেয় ভিন্নরকম এক প্রশান্তি।
আরও জানা যায়, নির্মাণশৈলীতে এটিকে মোগল আমলের মসজিদ বলে মনে হয়। এর দেয়ালে আছে মোগল স্টাইলের আর্চ এবং কার্নিশ ও গম্বুজের গোড়ায় মারলন নকশা। তবে মসজিদের সমতল ছাদ ও এ দেশীয় সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে সামনের চত্বরে ওঠার মুখে গড়া চৌচালা আকৃতির গেট সুলতানি আমলের নির্মাণশৈলীর কথা মনে করিয়ে দেয়। চার কোণায় পিলারের ওপর চারটি মিনার। মিনারগুলো আট কোণাকারে নির্মিত যা ছাদের কিছু ওপরে উঠে গম্বুজ আকৃতিতে শেষ হয়েছে। মসজিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো কন্দকারে নির্মিত সুবিশাল তিনটি গম্বুজ।
এছাড়া জানা যায়, মসজিদের চারপাশে রয়েছে সুরম্য গেটসহ অনেক পুরোনো বাউন্ডারি দেয়াল। দেয়ালের অভ্যন্তরে রয়েছে খোলা আঙিনা। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে কারুকার্যখচিত তিনটি প্রবেশপথ। প্রবেশপথের দুই পাশের পিলারের ওপরও রয়েছে ছোট দুটি মিনার। ভেতরে সামনের দরজা বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি মেহরাব। সামনের অংশে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন পোড়া মাটির কারুকাজ। মসজিদের পাশে রয়েছে প্রায় ২৫ একর আয়তনের বিশাল জলাশয়, যেটির নাম মিঠাপুকুর। মসজিদের ভেতরে সামনের দরজা বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি মেহরাব।
মসজিদটির ইমাম মোজাম্মেল হক জানান, আমি এই মসজিদে দুই মাস ধরে নামাজ পড়াচ্ছি, আজানও দেই। আমাদের এই মসজিদটা অনেক পুরাতন। ভেতরে এক কাতারে ১৭-১৮ জন নামাজ পড়তে পারে। প্রতি ওয়াক্তে ভেতর ও বাইরে মিলিয়ে ৩০-৪০ জন নামাজ পড়ে এখানে। আর বারান্দায় পাঁচ কাতারে নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বৃষ্টির দিনে বৃষ্টি আর রোদে নামাজ পড়তে কষ্ট হয় মুসল্লিদের।
মসজিদ কমিটির সভাপতি এমদাদুল হক জানান, প্রাচীন মসজিদটিতে কয়েক বছর ধরে সংস্কারের কাজ হয়নি। চার-পাঁচ বছর আগে সরকারি অর্থায়নে মসজিদটির মূল নকশা, আকার ও বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে কিছু সংস্কার করা হয়েছে। এ মসজিদটি কারও মতে ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে আবার কেউ কেউ বলছে এরও আগে এটি নির্মিত হয়েছে। তবে মসজিদে সাঁটানো তথ্য অনুযায়ী এটি ২১৩ বছরের পুরাতন স্থাপনা।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত এ দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি প্রাচীনকাল থেকে মিঠাপুকুরকে ইসলামী জনপদ হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে।
মন্তব্য করুন