মীর ফরহাদ হোসেন সুমন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৪ পিএম
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
নেপথ্যে প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা

চাকরি পেতে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে মামলা

সড়ক ও জনপথ বিভাগ, লক্ষ্মীপুর। ছবি : কালবেলা
সড়ক ও জনপথ বিভাগ, লক্ষ্মীপুর। ছবি : কালবেলা

সড়ক ও জনপথ বিভাগের লক্ষ্মীপুর অফিসে নিয়োগ পেতে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে মো. ইউসুফ নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। তিনি ওই অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীর সরকারি গাড়ির চালক মো. নুরুল আমিনের ছেলে। ওই নিয়োগ প্রচেষ্টায় প্রভাবশালী শ্রমিক লীগ নেতা নুরুল আমিন নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাড়িচালক নুরুল আমিনের ছেলে মো. ইউসুফ ২০১১ সালে এসএসসি ও ২০১৬ সালে শ্যামলী আইডিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা পাস করেন। এরপর তিনি ২-৩ বছর ঢাকায় বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগের লক্ষ্মীপুর উপবিভাগে দৈনিক ভিত্তিতে কাজে যোগদান করেন। লোকবলের পর্যাপ্ততা থাকলেও শুধু চালকের ছেলে এমন প্রভাবে তাকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসএসসি পাস করেই তিনি এইচএসসি পাসের যোগ্যতার পদে নিয়োগ পাওয়ায় বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ।

২০২২ সনে কাজ নেই মজুরি নেই ভিত্তিতে মো. ইউসুফকে অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ২০১৪ সন থেকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দাবি করে চাকরি স্থায়ীকরণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। চাকরি স্থায়ীকরণ করতে সারা দেশের ২৯৫ জন মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন করেছেন। ওই পিটিশনে মো. ইউসুফকে ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মরত দেখানো হয়েছে। ইউসুফ কর্মরত না থাকলেও পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বাবার প্রভাবে ওই মামলায় তার নামটিও দেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে গিয়েও তাকে কম্পিউটার টেবিলে বসে কাজ করতে দেখা গেছে।

এর আগে ২০১২ সনে নৈশপ্রহরী হিসেবে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগ পান নুরুল আমিনের চাচাতো ভাই আব্দুল খালেকের ছেলে জহিরুল ইসলাম। তিনি নৈশপ্রহরী (নাইটগার্ড) হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও তিনি সেই দায়িত্ব পালন না করে বড়বাবুর চেয়ারে বসেন। সেখানে বসে তিনি অফিসের ফাইলপত্র ব্যবস্থাপনার কাজ করেন।

২০১৪ সনে মাস্টাররোলে (দৈনিক ভিত্তিতে) অস্থায়ী নিয়োগ পান আব্দুল জলিল। তিনি ড্রাইভার নুরুল আমিনের শ্যালক। তাকে রোড শ্রমিক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২১ সালে একইভাবে মাস্টাররোলে নিয়োগ দেওয়া হয় তার ভাইয়ের ছেলে (ভাতিজা) সহোদর ইছাক রানা ও মো. আল আমিনকে। এর মধ্যে ইছাক চালক ও আল আমিন শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত গাড়িচালক আজাদ হোসেনকে বসিয়ে রেখে সেই কাজ দেওয়া হয় ইসহাককে। পরে এ নিয়ে সমালোচনা হলে আজাদকে রাস্তায় পানি দেওয়ার ট্রাকের চালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রয়োজন না থাকলেও ইসহাককে এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় শরীফুল ইসলাম বাপ্পীকে। তিনি চালক নুরুল আমিনের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত নিহত গৃহবধূ মমতাজ বেগমের ছেলে।

রীটে সারাদেশের ২৯৫ জন কাজ নাই মঞ্জুরি নাই ভিত্তিতে নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারীর নাম উল্লেখ আছে। এর মধ্যে ৯৯ থেকে ১০৪ পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের নিয়োগ প্রাপ্ত ছয়জন। এ ছাড়া আরও নিয়োগ প্রাপ্ত আছে যাদের নাম রিট পিটিশনে দেওয়া হয়নি। ছয়জনের মধ্যে ১০২ থেকে ১০৪ পর্যন্ত তিনজনের নিয়োগ দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম। এদের ২০২২ সনে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অথচ রিট পিটিশনে দেখানো হয়েছে ২০১৪ সনের ২৬ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ওই সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত কোনো বেতনভাতা শিটে এদের কারও নাম দেখা যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে মো. ইউসুফ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। এ বিষয়ে অফিসের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা যা বলেছেন, তাই সঠিক।’

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ও নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়িচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘আমরা যেহেতু এখানে চাকরি করি, সেহেতু আমাদের আত্মীয়স্বজন ও সন্তানরা অগ্রাধিকার পাবেন এটাই স্বাভাবিক। মিথ্যা বলেও যদি একজন শিক্ষিত যুবক সরকারি চাকরি পায়, তাতে বিরোধিতা করা উচিত না।’

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতে মামলা করেছেন তাদের ফাঁসি হওয়া উচিত। দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা শ্রমিকদের নিয়মিত টাকা পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অনেকে আমাদের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পোষ্য বা আত্মীয় হওয়ায় কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন বলে অনেকের সহ্য হচ্ছে না। তারাই এটা নিয়ে নানা প্রচারণা চালাচ্ছেন।’

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘মো. ইউসুফ ২০১৪ সাল থেকে এখানে কাজ করেছেন এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। কয়েক মাস থেকে তিনি এখানে দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেউ আদালতকে বিভ্রান্ত করলে তার দায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিতে হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২০ বছরের ব্যবসা বাঁচাতে ছাড়লেন চেয়ারম্যান পদ

তাসনিম অনন্যার অনুসন্ধানে মহাবিশ্বের চাঞ্চল্যকর রহস্য উন্মোচন

২০২৬ বিশ্বকাপে কবে মুখোমুখি হতে পারে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল?

বিশ্বকাপের গ্রুপ অব ডেথে ফ্রান্স

নুরুদ্দিন অপুর হাত ধরে আ.লীগ নেতার বিএনপিতে যোগদান

২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত: দেখে নিন কোন গ্রুপে কোন দল

২০২৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ যারা

রাতে আবার হাসপাতালে গেলেন জুবাইদা রহমান

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ছে, তালিকায় ৩০টির বেশি দেশ

খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, বন্ধ হয়েছে রক্তক্ষরণ

১০

‘বাঁধের মাটি বড় বড় খণ্ড হয়ে ঝুপঝাপ শব্দে ভেঙে পড়ে’

১১

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

১২

দেড় হাজার দৌড়বিদের অংশগ্রহণে হাফ ম্যারাথন

১৩

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ফ্রি যাত্রীসেবা

১৪

বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা, প্রতিবাদে বিক্ষোভ 

১৫

যুবদল নেতা সুমনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৬

দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

১৭

গণতন্ত্র মঞ্চের নতুন সমন্বয়ক সাইফুল হক

১৮

পুরোনো রাজনীতি পরিহার করে নতুন রাজনীতি করতে চাই : মঞ্জু

১৯

খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা দেখার জন্য শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন : স্বপন

২০
X