ঈদ উপলক্ষে জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দেওভোগ পাইকারি পোশাকের বাজার। নতুন বাহারি ডিজাইনের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন সেখানকার শ্রমিকরা। রমজানের শুরু থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে এই পাইকারি বাজারে।
তবে গতবারের তুলনায় এ মার্কেটে পোশাকের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এতে করে দ্বিগুণ পুঁজি লাগছে ব্যবসায়ীদের। ফলে ক্রেতাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে পোশাক। ঈদকে ঘিরে এই বাজারে বেচাকেনা শত কোটি টাকা ছাড়াবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
জানা গেছে, দেওভোগ বাজারে সব বয়সের মেয়েদের থ্রি পিস, কামিজ, ছেলেদের পাঞ্জাবি ও ফতুয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক পাইকারি দামে বিক্রি হয়। পাঁচ শতাধিক দোকানে প্রায় ১৫ হাজার দর্জি ঈদ উপলক্ষে দিনরাত কাজ করছেন। এখান থেকে ঢাকার বঙ্গমার্কেট ও সদরঘাটসহ সারা দেশের ব্যবসায়ীরাও পোশাক কিনে নিয়ে যান। দেশের সব জেলার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের পোশাকের বড় একটি অংশের জোগান দেয় এই মার্কেট।
মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতারা দোকানে বাহারি ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছে। ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকা মূল্যের তৈরি পোশাক বিক্রি করছেন তারা। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে ঈদ হবে বলে চায়না টিস্যু স্ল্যাবের ও ভারতীয় সুতি কাপড়ের চাহিদা বেশি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন মার্কেটের শ্রমিকরা। মার্কেটের দর্জি ওমর ফারুক বলেন, ‘রমজান মাসে আমাদের কাজ ভালো চলছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে আমাদের ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলা থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা পোশাক কিনতে আসছেন।’
আরেক দর্জি সুমন ইসলাম বলেন, ‘মানসম্মত ও নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক তৈরির চেষ্টা করছি। মেশিনের সাহায্যে এসব ডিজাইন করা হয়।’
পাইকারী মার্কেটের পোশাক বিক্রেতা মো. আলী নূর বলেন, ‘কাপড়ের দাম বাড়ায় আমাদের এবার তৈরি পোশাকের দাম বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। তবে বেচাকেনা ভালো। এ বছর নতুন করে পোশাক বের হয়েছে নায়রা, আলিয়াকাট, আফগান, গারারা, সারারা।’
আরেক বিক্রেতা রমজান বলেন, ‘এবার বেচাকেনা ভালোই। গত বছরের ১০০ টাকার কাপড় এ বছর ১৫০ টাকা হয়ে গেছে। কাপড়ের দাম বেশি হওয়ায় পোশাকের দাম বেশি হচ্ছে। পোশাক তৈরির খরচ বেশি হওয়ায় আমাদের ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
মো. হৃদয় নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘রমজানের আগে থেকেই আমাদের বিক্রি শুরু হয়েছে। এই মার্কেট থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার লোকজন পোশাক কিনে নিয়ে যায়। বর্তমানে কাপড়ের মূল্য বেশি হওয়ায় নতুন পোশাকের দাম বেশি। এবার চার কোটি টাকা বিক্রির আশা করছি। তবে সব দিক দিয়ে বেচাকেনা ভালো।’
রাজধানীর শনিআখরা থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. হারিস বলেন, ‘ঢাকার অনেক পাইকারী ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পোশাক কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। এই মার্কেটে আমরা দাম কম পাই। তাই এই মার্কেটে সুযোগ সুবিধা বেশি হওয়ায় এখান থেকে কিনে খুচরা বাজারে মানুষের কাছে কম দামে বিক্রি করি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা আরেক ব্যবসায়ী নুর ইসলাম বাবু বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রতি ঈদেই এই মার্কেট থেকে পোশাক কিনি। এখান থেকে গুণগত মান ও কম দামে পোশাক পাওয়া যায়। অন্য মার্কেট থেকে দেওভোগ মার্কেটে কম দামে পাওয়া যায়।’
নরসিংদির খুচরা ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আগে পুঁজি লাগতো এক লাখ টাকা, এবার পোশাকের দাম বেশি হওয়ায় পুঁজি লাগছে দুই লাখ টাকা। আমাদের খুচরা দোকানদের লাভ খুব একটা বাড়েনি বরং কমে আসছে। এই মার্কেটে ঢাকা থেকে কম মূল্যে পোশাক কেনা যায়। যার জন্য আমরা এখানে আসছি।’
মহেশপুর ঝিনাইদাহ থেকে আসা আরেক পোশাক ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এখানে ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাকের ডিজাইনের মতো পোশাক এখান থেকে পাওয়া যায়। যার কারণে এই মার্কেট থেকে পোশাক কিনে ক্রেতাদের চাহিদা মিটানো যায়। এবার পোশাকের দাম বেশি তারপরও কিনতে হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় কম কিনছি।’
দেওভোগ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেওয়ান বলেন, ‘এই মার্কেট অনেক পুরাতন ঐতিহ্যবাহী মার্কেট। দেশের ৬৪ জেলা থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে সুলভ মূল্যে পোশাক নিয়ে যায়। গত বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাইকারি পোশাক হওয়ায় রমজানের শুরুর দিকেই বেশিরভাগ বিক্রি হয়ে গেছে। এখন আমাদের টার্গেট পূরণ হবে। আশা করছি ১০০ কোটি টাকার ওপরে বিক্রি হবে।’
মন্তব্য করুন