টাকার অভাবে বাজার করতে না পারায় বাড়ির পাশ থেকে শাক তুলে তা খেয়ে রাখেন রোজা। ইফতার করেন করেন শুকনো মুড়ি আর পানি দিয়ে। শেষ কবে মাছ-মাংস পাতে তুলেছেন তাও মনে করতে পারেন না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বৃদ্ধ ঝুমুর আলী। স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনোমতো দিন পার করছেন তিনি।
স্ত্রী সুফিয়া বেগম ও মেয়ে কাকলী খাতুনকে নিয়ে তিনজনের সংসার হলেও তারা সবাই অসুস্থ। শারীরিক অসুস্থতা তাদের নিত্যসঙ্গী। পরিবারের একমাত্র আয় করা ঝুমুর আলী স্ট্রোক করে হারিয়েছেন চলাফেরার ক্ষমতা। ভেঙে গেছে স্ত্রী সুফিয়া বেগমের কোমরের হাড়। একমাত্র মেয়ে কাকুলিও আক্রান্ত মরণব্যাধি রোগ ক্যান্সারে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কবুরহাট মাদ্রাসা পাড়ার বাসিন্দা বৃদ্ধ ঝুমুর আলী। অসুস্থ স্ত্রী সুফিয়া বেগম ও মেয়ে কাকলী খাতুনকে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে পার করছেন দিন। অভাবের এই কষ্ট সইতে না পেরে চোখ বেয়ে কেবল ঝড়ে পড়ছে অশ্রু।
পরিবারে কারো উপার্জন না থাকায় তিনবেলা খাবার তো দূরের কথা রমজান মাসে রোজা রেখে ইফতারও জোগাড় করতে পারেন না।
ঝুমুর আলী বলেন, আমাকে দেখার মতো পৃথিবীতে কেউ নেই। আমাকে কেউ দেখে না। চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউ কোনোদিন আসেনি। আমি টাকা কোথায় পাব। খাবার জোগাড়ের টাকা নেই, শাক দিয়ে ইফতার করি। সাদা মুড়ি আর শাক হলো আমার ইফতার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা কখনো না খেয়েও দিন পার করেন। নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও। তাদের মানবেতার এই জীবন-জীবিকার খোঁজ নিচ্ছেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কেউই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারের বয়স্ক ভাতার কার্ডটিও জোটেনি এই অসহায় পরিবারটির কপালে।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিনজনের মাথা গোজার ঠাঁই এক কাঠা জমির ওপর একটি মাটির ভাঙাচোরা ঘর। সেজো ভাই মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে কিনবেন বলে বায়না করেছিলেন ঝুমুর আলী। কিন্তু একমাত্র আশ্রয় জমিটুকুও ভাই বিক্রি করে দিয়েছেন অন্য কারও কাছে। জমির মালিক এসে ভেঙে দিয়েছে রান্নাঘর। চলাফেরার রাস্তায় ও উঠানে ফেলে রেখেছে কাঁটা। তাইতো বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে ইট বসিয়ে রান্না করতে হচ্ছে অসহায় পরিবারটিকে। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
তবে অসহায় পরিবারটিকে প্রাথমিকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম শীল।
ঝুমুর আলীর পরিবারকে সাহায্য করার জন্য সমাজের বিত্তশীল ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহ্বান সচেতন নাগরিকদের।
মন্তব্য করুন