মৌলভীবাজারে ব্যাংক থেকে কৌশলে গ্রাহকদের টাকা ছিনতাই করা একটি চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতরা গ্রাহকদের টার্গেট করে ব্যাংকে প্রবেশ করত। তারপর নানা কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিত। তাদের কৌশল এতটাই নিখুঁত ছিল যে, কেউ বুঝে উঠতে পারতেন না। ঈদকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক ব্যাংক থাকে কর্মব্যস্ত। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই চক্র ছিনিয়ে নিত গ্রাহকের অর্থ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টায় মৌলভীবাজার শহরের সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত ডাচ বাংলা ব্যাংক পিএলসিতে প্রবাস থেকে আসা টাকা তুলতে যান ব্যবসায়ী তানভীর হাবিব চৌধুরী রুমেল। নগদ দুই লাখ টাকা তুলে তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাকে এক হাজার টাকার নোট দেওয়ার জন্য বলেন। ব্যাংক কর্মকর্তা এক হাজার টাকার বান্ডিল দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে ৫০০ টাকা নোটের বান্ডিল প্রদান করেন। তখন কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি রুমেলকে বলেন, তিনি এক হাজার টাকার বান্ডিলে এক্সচেঞ্জ করে দেবেন। টাকা হাতে নেওয়ার পরই রুমেল কিছু সময়ের জন্য নিস্তেজ অনুভব করেন। তখন ওই চক্র নগদ ৮১ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে তিনি মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
পিবিআই জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. সাদ্দাম ব্যাপারী (৩৫) মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মামুন মিয়ার বাসায় ভাড়া থাকেন তিনি। গত ৯ এপ্রিল রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন কবরস্থান এলাকা থেকে তাকে এবং অপর আসামি খোকন ফকিরকে (৪৫) সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ঝালকুড়ি পশ্চিমপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন যে, ২৭ এপ্রিল ঢাকা মেট্রো-গ-১৫-০৪৩৩ গাড়ি দিয়ে মৌলভীবাজার গিয়ে সেন্ট্রাল রোডস্থ ডাচ বাংলা ব্যাংকে প্রতারণা করে ৮১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে আবার ওই গাড়িযোগে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
বাদী টাকা উত্তোলনের পর ব্যাংকের ক্যাশ শাখা থেকে ৫শ টাকার বান্ডিলের নোটের পরিবর্তে ১ হাজার টাকা নোটের বান্ডিল চাইলে পাশে থাকা প্রতারক চক্রের একজন বাদীকে বলেন, উক্ত আসামি খোকন ফকির এর নিকট ভাংতি টাকা রয়েছে। তিনি চাইলে খোকন ফকিরের নিকট থেকে ভাংতি টাকা নিতে পারবেন। এ সময় খোকন ফকিরসহ অন্যান্য আসামিরা বাদীকে ব্যাংকের ভিতরে বেঞ্চে বসিয়ে খোকন ফকির বাদীর নিকট থেকে ১ হাজার টাকা নোটের একটি বান্ডিল গ্রহণ করেন। খোকন ফকির বাদীকে ৩৮টি ৫শ টাকার নোট দিয়ে গণনা করতে বলেন এবং অন্যান্য আসামিরা সুকৌশলে বাদীর চতুর্দিকে ঘোরাফেরা করে বাদীর সঙ্গে কথা বলে বাদীকে ব্যস্ত রাখে, যেন প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে না পারেন। বাদী টাকা গণনা শুরু করলে আসামিরা দ্রুত ব্যাংক থেকে বের হয়ে গাড়ি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আসামি সাদ্দাম ব্যাপারী গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে যায়। সাদ্দাম ব্যাপারীর নিকট থেকে গত ৯ এপ্রিল গাড়িটি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন কবরস্থান রোডের মোড় থেকে উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে এই মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। প্রাথমিক তদন্তে অত্র মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিরা প্রতারক চক্রের সদস্য বলে জানা যায়। আসামিদের বিরুদ্ধে সারা দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
পিবিআই মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংকের নিরাপদ ব্যাস্টনির ভিতরে অবস্থান করে প্রতারক চক্র অভিনব কায়দায় অপরাধ সংঘটিত করেছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত তদন্ত দ্বারা প্রযুক্তিনির্ভর তদন্তের জন্য পিবিআই মৌলভীবাজার মামলাটি অধিগ্রহণ করেছে।
মন্তব্য করুন