ঈদগাহে একাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ। ঘটনাটি ঘটে বগুড়ার শাজাহানপুরের আশেকপুর ইউনিয়নের পারতেখুর গ্রামের পুরোনো কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে।
ওই বৃদ্ধ মুসল্লি ইউনিয়নের পারতেখুর সরদার পাড়ার বাসিন্দা মমতাজুর রহমান। তিনি গ্রামের একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে একা একজন কেন এভাবে নামাজ আদায় করলেন এ বিষয়টি জানতে চাইলে মমতাজুর রহমান বলেন, আমি সাধারণ মানুষ। ওতো প্যাঁচ বুঝি না। ২০ বছর যাবত আমি এই মাঠে নামাজ পড়ি। যতদিন বেঁচে থাকব, এই মাঠেই নামাজ আদায় করব।
তবে বিষয়টি সম্পর্কে স্থানীয় ইউপি সদস্য নান্নু জানান, ঈদগাহ মাঠের ইমামতি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এবার ওই মাঠে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু মমতাজুর রহমান নামের ওই ব্যক্তি নিজের মাঠের মায়া ত্যাগ করতে না পেরে মনের দুঃখ আর কষ্ট নিয়ে একাই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। তার বক্তব্য কেউ এই মাঠে ঈদের নামাজ আদায় না করলেও তিনি এ মাঠ ছাড়া অন্য কোথাও নামাজ আদায় করবেন না। প্রয়োজনে প্রতিবছর তিনি একাই নামাজ আদায় করবেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় ২০ বছর আগে পারতেখুর পূর্বপাড়ার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠটি নির্মিত হয়েছিল। পারতেখুর পূর্বপাড়ার মৃত কছের আলীর দুই ছেলে আব্দুল মান্নান এবং মৃত আব্দুল হালিম ওই মাঠের জন্য জমি দান করেন। প্রায় তখন থেকেই ডা. আব্দুল মান্নান নামে এক ব্যক্তি ওই মাঠে ইমামতি করে আসছিলেন। যিনি স্থানীয়ভাবে মান্নান পীর নামেই পরিচিত। ২-৩ বছর আগে গ্রামের একটি পক্ষ মান্নান পীরের ইমামতিতে নামাজ আদায়ের বিপক্ষে অবস্থান নেন।
এ নিয়ে মান্নান পীরের পক্ষে আশেকপুর সিপি উচ্চবিদ্যাললের সাবেক প্রধান শিক্ষক, জমিদাতা আব্দুল মান্নানসহ পীরের মুরিদরা একটি পক্ষ এবং পারতেখুর সরদার পাড়ার মৃত আনসার আলী সরদারের ছেলে খোকা মিয়া ও তার ভাই সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম এবং মাওলানা আব্দুর রশিদসহ গ্রামের অপর একটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একপর্যায়ে খোকা মিয়ার পক্ষ পারতেখুর সরদার পাড়ার ভেতরে নতুন আলাদা একটি ঈদগাহ মাঠ নির্মাণ করে পুরোনো মাঠ ত্যাগ করেন। এ বছর থেকেই অন্যত্র ঈদের নামাজ আদায়ের ঘোষণা দেন।
এমতাবস্থায় ইউপি সদস্য নান্নু, সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম, ইনসান আলী টুকুসহ গ্রামের তৃতীয় একটি পক্ষ ঈদের একদিন আগে বুধবার রাতে মান্নান পীরের পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে তৃতীয় পক্ষ প্রস্তাব করেন, তারা মান্নান পীরের ইমামতিতে নামাজ আদায় করবেন না। তারা নিজেরা আগে প্রথম জামায়াতে নামাজ আদায় করবেন। যারা মান্নান পীরের ইমামতিতে নামাজ আদায় করতে চান তারা পরে দ্বিতীয় জামায়াতে নামাজ আদায় করলে করতে পারেন। কিন্তু ওই বৈঠকে কোনো পক্ষই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
এমতাবস্থায় মান্নান পীরের পক্ষ ওই মাঠ ত্যাগ করে মান্নান পীরের প্রতিষ্ঠিত হাফেজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসা মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন। অপর দিকে তৃতীয় পক্ষের লোকজন দ্বিতীয় পক্ষের নতুন মাঠেও যাননি এবং পুরোনো মাঠেও নামাজ আদায় করেননি। গ্রামের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ পাশের খরনা ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিষয়টি আশপাশের গ্রামের মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নান্নু ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, একমাত্র মান্নান পীর নাছোড়বান্দা হওয়ায় গ্রামের মানুষ ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ডা. আব্দুল মান্নান ওরফে মান্নান পীরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
তবে মান্নান পীরের মুরিদ মাঠের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ঠিকাদার আব্দুল মোত্তালেব জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই মাঠে ঈদের জামায়াত করা হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে তাই মান্নান পীরের মাদ্রাসা মাঠে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মন্তব্য করুন