পুরো রমজানে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। ফলে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছিল কুয়াকাটার পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীরা। সে মন্দা কাটিয়েছে এবারের ঈদ ও বাংলা নববর্ষের দীর্ঘ ছুটিতে।
দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন জায়গায় পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। চা দোকানি থেকে শুরু করে হোটেল মোটেল ও রিসোর্টে ছিল ব্যস্ততার ছাপ। দম ফেলানোর ফুরসত ছিল না কারোরই। যে যার মতো করে পর্যটকদের সেবায় সময় কাটিয়েছে।
তবে গরমের কারণে কিছুটা অস্বস্তিতে ছিল পর্যটকরা। আগত পর্যটকরা সৈকতের বুকে আছড়ে পড়া ছোট-বড় ঢেউয়ে সাঁতরে মিতালিতে মাতেন। অনেকে বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড়ে মাতেন। অনেকে আবার ঘোড়ায় চড়ে, ওয়াটারবাইক কিংবা মোটরবাইকে চড়ে সৈকতের বিভিন্ন পর্যটনস্পট ঘুরে দেখেন। পাশাপাশি এমন মুহূর্তগুলো স্মৃতিতে ধরে রাখতে কেউ কেউ ক্যামেরাবন্দি করেন। সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন আগত পর্যটকসহ পর্যটননির্ভর সকল ব্যবসায়ীরা।
শতভাগ বুকিং ছিল কুয়াকাটার অধিকাংশ হোটেলে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ, নৌপুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লেও সে অনুপাতে সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি তেমন।
কিছু কিছু পর্যটকরা অভিযোগ করেন, এমনি গরমের তীব্রতা তারপর আশপাশে পুরো রাস্তায় ধুলোবালি। সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় ময়লা-আবর্জনা। খাবারের দামের তুলনায় মান নেই।
সৈকতে ফুসকা বিক্রেতা মো. হুমায়ুন বলেন, রমজানে বসে বসে জমানো টাকা শেষ করেছি। এবার ঈদে রমজানের লোকসান কাটিয়ে কিছু টাকা জমাও করেছি।
আবাসিক হোটেল খান প্যালেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান রাসেল বলেন, রমজান মাসজুড়ে হোটেল খালি ছিল। রমজানে স্টাফ বেতন ও বিদ্যুৎ বিলসহ লাখ লাখ টাকা লোকসান। তবে ঈদের পরদিন থেকেই পর্যটকের সংখ্যা ছিল অনেক। ঈদের ছুটিতে আমাদের শতভাগ রুম বুকিং হয়েছে। এ সপ্তাহের পুরেটাই শতভাগ বুকড।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) সাধারণ সম্পাদক কেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীদের বিক্রি বেড়েছে। সবাই লাভের মুখে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ বলেন, প্রায় হোটেলের ৮০ শতাংশ রুম বুকিং ছিল। রমজানের ঘাটতি পুষিয়ে আমরা উঠতে পারছি। এখনো পর্যটকরা ফোনে রুম বুকিং দিচ্ছেন।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের পোশাক পরিহিত পুলিশের পাশাপাশি প্রত্যেকটি পর্যটন স্পটে সাদা পোশাকে পুলিশ সার্বক্ষণিক ডিউটিতে ছিল। এখানে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আসা পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হয় সে ব্যাপারে আমরা সর্বদা সতর্ক অবস্থায় ছিলাম।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, পর্যটকদের সেবায় আমরা প্রস্তুত ছিলাম। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে কুয়াকাটায় পর্যটক বেড়েছে। ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা মহাসড়ক ফোর লেন বাস্তবায়িত হলে আরও পর্যটক বাড়বে। পাশাপাশি বড় বড় ব্যবসায়ীরা ইনভেস্ট শুরু করছে। এবারে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল পর্যটকরা।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটা পর্যটকে মুখর। পর্যটকদের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলাপাড়া থানা, মহিপুর থানা, কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, মেডিকেল টিম প্রস্তুত ছিল।
মন্তব্য করুন